স্কুল লেভেলে ভালো রেজাল্ট করা হাজারো স্বপ্ন মাথায় নিয়ে ঘুরে বেড়ানো ছেলেরা স্কুল লাইফের শেষে এসে একটা স্বপ্নের সম্মুখীন হয়ে দাঁড়ায়। স্বপ্নটির নাম নটরডেম কলেজ। কতিপয় শিক্ষক কিংবা গার্ডিয়ানরা যেন ধরেই নিয়েছে যে নটরডেমে ছেলে পড়ে মানে সে দেশের সেরা শিক্ষার্থী, আর চান্স পায় নি মানে এর ভবিষ্যতে টিকে থাকা খুবই কঠিন। আর যে ছেলে পরীক্ষাই দেয় নি, সে তো মঙ্গল গ্রহের প্রাণী। একজন নটরডেম কলেজের শিক্ষার্থী হিসেবে এইসব কিছুই আমার খুব কাছ থেকে দেখা। নটরডেম কলেজ যে যেকোনো রেজাল্টের দিক থেকে দেশের এক নাম্বার কলেজ সে বিষয়ে আমার বা কারো বিন্দুমাত্র কোনো সন্দেহ নাই। কিন্তু নটরডেম সবাইকে ভাল ফল এনে দেয় না। অনেকের ক্ষেত্রে এই কলেজ খুব ভালো কাজে দেয়, অনেকের জন্য এই কলেজ তার পড়াশোনাকেই হয়তো গোঁড়া থেকে ভেঙে ফেলে। আমি এই আর্টিকেলে ব্যাখ্যা করার চেষ্টা করবো কেন নটরডেম কলেজে পড়া উচিত এবং কেন উচিত নয়। যেহেতু এটা কলেজ এডমিশনের সময়, তাই দুই দিক থেকে চিন্তা করেই যেন ছেলেরা নটরডেম কলেজে পড়বে কি পড়বে না তার সিদ্ধান্ত নিতে পারে সেই উদ্দেশ্যেই আজ লিখতে বসা।
কেন নটরডেম কলেজে পড়া উচিত:
১. তুমি যদি সারাজীবন একটি ছোট স্কুলে পড়াশোনা করো, যেই স্কুলের নাম কেও খুব একটা জানে না, তাহলে নটরডেম কলেজ তোমাকে জীবনের প্রথমবারের মতো একটা স্ট্রং আইডেনটিটি দিবে। দেশের যেকোনো শিক্ষিত মানুষকে তুমি ডেমিয়ান পরিচয় দিলে তোমাকে অন্য চোখে দেখবে। মেয়েদের থেকে পাত্তা পাবা বেশি। আর সবথেকে বড় বিষয় নটরডেমের এলামনাই অনেক স্ট্রং। কর্মক্ষেত্রে ভালো যেকোনো জায়গায় গিয়ে তুমি ডেমিয়ান হিসেবে এক্সট্রা ফেসিলিটিজ পাবে, কারণ দেশের ম্যাক্সিমাম বড় বড় পোস্টের মানুষের কলেজ লাইফ এই কলেজেই পার হয়েছে। আর সবথেকে বড় কথা, "ভাবটাই আলাদা"!
Damian অনেক দামি! |
২. এই কলেজে তুমি সারা বছর সপ্তাহে দুইটা করে পরীক্ষা দিতে দিতে তোমার সব এক্সাম ফোবিয়া কই গিয়ে পালাবে খুঁজেও পাবে না।
৩. এই কলেজের ডিসিপ্লিন অনেক স্ট্রং। অবাধ্য গরুকে কীভাবে শায়েস্তা করা যায় তা ফাদারদের রক্তের প্রতিটি কণায় মিশে আছে।
৪. এখানে পাচ্ছো দেশসেরা সব মেধাবী শিক্ষার্থীদের সাথে পড়ার সুযোগ। পরীক্ষার মাধ্যমে যাচাই বাছাই করে দেশসেরা সব ট্যালেন্টেড ছেলেদের খুঁজে বের করে নটরডেম কলেজ। ভালোদের সাথে থাকতে থাকতে তোমার রেজাল্টও হয়ে উঠবে ঈর্ষণীয়! কথায় আছে না - "সৎসঙ্গে স্বর্গবাস, অসৎসঙ্গে নরকবাস"।
৫. এই কলেজে আছে ২০+ টি ক্লাব। তোমার ইন্টারেস্ট অনুযায়ী যেকোনো ক্লাবে জয়েন করে সাংগঠনিক বিভিন্ন দায়িত্ব পালনের মাধ্যমে তোমার লিডারশিপ স্কিল গ্রো করবে, কলেজ লাইফটাও বেশ ভাল যাবে। কলেজে একটা ভার্সিটি ভার্সিটি ফিল পাবা আরকি!
৬. দেশের বিভিন্ন প্রান্তের শিক্ষার্থীদের সাথে পড়ার সুযোগ। নানান মানুষের ভাষা, আচরণ, সংস্কৃতির প্রত্যক্ষ পরিচয় পাবে এখানে।
কেন নটরডেম কলেজে পড়া উচিত নয়:
১. কলেজের এত প্রেশার, রেগুলার এটেনডেন্স বজায় রেখে চলতে গিয়ে তোমার নিজস্ব স্বকীয়তা নষ্ট হতে পারে। তুমি হয়তো নিজের মতো করে পড়তে স্বাচ্ছ্যন্দ বোধ করো, এই কলেজে তা সম্ভব নয়। নটরডেমে এসে তুমি ফেল করলে প্যারা নাই, কিন্তু এটেনডেন্স ৮৫% এর নিচে নামলে জীবন তেজপাতা হয়ে যাবে, থাকবে জাহান্নামের শাস্তির মতো জেল ক্লাস আর জরিমানা। আর ল্যাব মিস করলে তো জুতার তলি ক্ষয় হয়ে যাবে কোনো সন্দেহ নাই!
২. এখানে এসে প্রথমেই তোমার কনফিডেন্স লেভেল লো হয়ে যাবে। এমন মনে হবে যে তুমি সবথেকে বোকা, নিরেট গর্দভ! আস্তে আস্তে এই কনফিডেন্স ব্রেক হওয়ার জন্য তার ইফেক্ট তোমার পড়াশোনায় পরতে পারে। তখন তোমার আমও গেল, ছালাও গেল অবস্থা হবে।
৩. একবার যদি কোনো কারণে তুমি কিছু ক্লাস বা এক্সাম মিস করে ফেলো, তাহলে তোমার আবার সবার সাথে ফ্লোতে আসতে জান বেরিয়ে যাবে। দুইটা বছর তুমি সারাক্ষণ স্ট্রেসের উপরে থাকবা। এইটা কলেজ না রে ভাই, একটা জ্যান্ত রোলার কোস্টার!
৪. এই কলেজে এসে তোমার ফ্রেন্ড বানাতে অনেক বেগ পেতে হবে। যদি তুমি স্কুলের ফ্রেন্ড সার্কেল নিয়ে ভর্তি হও তাহলে প্যারা নাই। বাট যদি তুমি একা চান্স পাও তাইলেই ঝামেলা। এক্সট্রোভার্ট হইলে তাও মানিয়ে নিতে পারবা, বাট ইন্ট্রোভার্ট হইলে দুইবছর একা থাকার সম্ভাবনাই বেশি।
৫. এইটা যেহেতু বয়েজ কলেজ, কলেজে এসে কোনো মেয়েদের দেখা পাবা না। আমি প্রেমের জন্য বলতেসি না। কম্বাইন্ড ক্লাসে অপজিট জেন্ডারের সামনে ভালো করার একটা মনোভাব সৃষ্টি হয়, যা আমার দেখামতে সবক্ষেত্রেই ভালো প্রভাব ফেলে। যা এই কলেজে সম্ভব না।
৬. এইখানে হাজার হাজার স্টুডেন্টের মাঝে তুমি কোনো টিচারের কাছেই তেমন পরিচিত হবে না। তাই টিচারের সান্নিধ্যে থেকে পড়ার সুযোগ থেকে অনেকটাই বঞ্চিত হবে।
৭. এইখানে সব টিচাররাই কিন্তু বেস্ট না, বেস্ট বেস্ট সব টিচাররাই এখন আর নাই। অনেক টিচার আছে যারা ভালোমতো ক্লাসই নিতে পারে না, কিছু বুঝাইতেও পারে না। ডেমিয়ানদের ক্লাসে ঘুমায়া থাকার ছবি নিশ্চয়ই সবাই দেখছেন কমবেশি! আর এইখানে ৯৯% পোলাপানই ২-৩টা মিনিমাম প্রাইভেট পড়ে। কলেজের টিচাররাই পড়ায়। আগে নটরডেমের টিচাররা এই ব্যবসা থেকে দূরে ছিল, এখন এটা তাদের রক্তে মিশে গেছে।
৮. যারা দূরে থেকে এখানে পড়তে আসে, তাদের কলেজের বাইরে প্রাইভেট হোস্টেলে থাকতে হয়। আরামবাগের হোস্টেলগুলার মান যেমন অতি নিম্নমানের তেমনি খরচ অতি উচ্চমানের। এসব ক্ষেত্রে অনেক টাকা খরচ করেও দেখা যায় হোস্টেলের পরিবেশের সাথে মানিয়ে নেয়া বেশ কষ্টকর একটা ব্যাপার হয়ে দাঁড়ায়! না পারবেন ভালোমতো খাইতে, না পারবেন শান্তিতে একটু বেশি স্পেস নিয়া থাকতে। আর বাসা থেকে দূরে এর আগে কখনো না থাকলে, মানিয়ে নিতে বেশ বেগ পেতে হতে পারে!
৯. ক্লাস হয় মান্ধাতার আমলের ব্ল্যাকবোর্ডে। জানালার লাইটের রিফ্লেকশনে বোর্ডের নানান জায়গায় লেখা বোঝা যায় না। একজন দেখে তো আরেকজন দেখে না। আর বিশাল ক্লাসরুম, পিছনে সিট পরলে বিশাল ঝামেলা বোর্ডের লেখা দেখতে।
The unromantic blackboard |
আমি বলছি না নটরডেম কলেজ সেরা কলেজ, বা আমি এটাও বলতেছি না এটা খারাপ কলেজ। আমি আমার দৃষ্টিকোণ থেকে আমি দুই সাইডের সবকিছুই প্রায় এক্সপ্লেইন করেছি। সবকিছু বুঝে তবে সিদ্ধান্ত নাও, তোমার জন্য কোনটা ভালো হবে। কারণ এইটা তোমার লাইফের সবথেকে বেস্ট ডিসিশনও হতে পারে, আবার সবথেকে বাজে ডিসিশনও হতে পারে। মনে রাখবা, একটা সিস্টেম কখনোই সবার জন্য সমান কাজ করে না। কেও ভালো রেজাল্ট পাবে, কেও খারাপ। তাই তোমাকেই বুঝে নিতে হবে, তোমার জন্য এই কলেজে পড়া উচিত হবে কি হবে না।
বিঃদ্রঃ এইখানে সব সিলেক্টেড মেধাবীরা এসে ভর্তি হয় যাদের পুরো দেশ থেকে খুঁজে ছেঁকে আনা হয়। তাই রেজাল্ট যে এদের অসম্ভব ভালো হবে তা স্বাভাবিক। পুরো ক্রেডিট কলেজের না। আমার মতে সব ক্রেডিট স্টুডেন্টদেরই!(ব্যক্তিগত মতামত)
Written by: Arif Shahriar(NDC batch-2023)
Feel free to message me on Facebook: www.facebook.com/Arif0Shahriar0Rabby
Comments
Post a Comment