Min menu

Pages

latest news

Quotes from দিবারাত্রির কাব্য-মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় !


 বইটি পড়লে অনেক কিছু জানতে পারবেন।আমি এখানে শুধুই বইটি থেকে উল্লেখযোগ্য কিছু উক্তি তুলে ধরেছি যাতে লেখকের

দিবারাত্রির কাব্য
জীবনভাবনা সম্পর্কে
ধারনা পাওয়া যায়!বইটি না পড়তে চাইলে এই পোস্টটি পড়লেই বইটির সম্পূর্ণ দর্শন ধরতে পারবেন বলে আমি আশাবাদী!

বইটি প্রথম গ্রন্থাকারে প্রকাশিত হয় ১৯৩৫ সালে!

১.আর্থিক পরাধীনতা স্বীকার করবার সাহস যে মেয়ের নেই তাকে কেউ ভালবাসে না।
২.বিয়ের ব্যাপারে বাধ্য হয়ে মানুষকে যে সব হিসাব ধরতে হয় সেদিক থেকে ধরলে কোনো ছেলেমেয়েই সংসারে ঠকে না।


৩.হয়তো সত্য সত্যই মেয়েদের মঙ্গলের ব্যবস্থা করতে গিয়ে পুরুষেরা গোঁড়াতেই কোথাও একটা গলদ বাধিয়ে বসে আছে,যে জন্য ওদের মনের শৈশব কোনোদিনই ঘুচতে চায় না।ঘুণ যদি ধরে তো একেবারে কাঁচা মনেই ধরে, নইলে ওরা আজন্ম শিশু।জীবন-সাগরের তীরে বালি খুঁড়ে পুকুর তৈরি করে ওরা খুশি থাকবে,সমুদ্রের সঙ্গে তাদের সে কীর্তির তুলনা কখনো করে না।ডাবের জলে ডাবের শাঁসে জগতের ক্ষুধা তৃষ্ণা দূর হয় চিরদিন এই থাকত ওদের ধারণা,জগতের ক্ষুধাও ওরা বুঝবে না,তৃষ্ণার প্রকৃতিও জানবে না।
৪.শরীর ভাল রাখার চেয়ে বড় কাজ মানুষের নেই।শরীর ভালো না থাকলে মানুষ ভাবুক হয়,দুঃখ বেদনা কল্পনা করে,ভাবে জীবনটা শুধু ফাঁকি।বদহজম আর ভালবাসার লক্ষণগুলি একরকম!


৫.(সুপ্রিয়াকে উদ্দেশ্য করে হেরম্ব)ছেলেমানুষ বললে তোরা রাগ করিস,এদিকে বয়স কমাবার চেষ্টার কামাই নেই!
৬.নিজের ব্যবসার কথা বলতে পেলে সকলেই খুশি হয়।


৭.ভালবাসার বাড়া-কমা নেই।ভালবাসা ধৈর্য আর তিতিক্ষা।একটামা উগ্র অনুভূতি হল ভালবাসা।
৮. স্ত্রীকে যে ভালবাসে সে অপেক্ষা করে।
৯.মৃত্যু মুক্তি দেয় না যাহাকে
   প্রেম তার মহামুক্তি।-নূতন শরীর
             মুক্তি নয়,মুক্তির আভাষ।
১০.সুখ?নাই বা রইল সুখ!সুখ দিয়ে কি হবে?সুখ তো শুঁটকি মাছ!জিভকে ছোটলোক না করলে স্বাদ মেলে না।সুখ স্থান জুড়ে নেই,প্রেম দিয়ে ভরে নাও,আনন্দ দিয়ে পূর্ণ কর।সুবিধা কত!মদ নেই যদি,মদের নেশা সুধায় মেটাও।ব্যস,আর কী চাই?
১১.মেয়েরা মার চেয়ে পিতাকেই নকল করে বেশি,পিতার শিক্ষাই মেয়েদের জীবনে বেশি কার্যকরী হয়।
১২.মন্দের সম্পর্কে না এলে ভালো হওয়া কারো পক্ষেই সম্ভব নয়।জীবনের রুক্ষ কঠোর আঘাত না পেলে মানুষ জীবনে পঙ্গু হয়ে থাকে,তরল পদার্থের নতো তার নিজস্ব গঠন থাকে না।
১৩.কুমারীর কাউকে প্রণাম করতে নেই।
১৪.প্রেমিকের কাছে প্রেমের অগ্রগতির ইতিহাস নেই।যতদূরই এগিয়ে যাক সেইখান থেকেই আরম্ভ।আগে কিছু ছিল না ছিল অন্ধকারের সেই নিরন্ধ্র কুলায়,যেখানে নব জন্মলাভের প্রতীক্ষায় কঠিন আস্তরণের মধ্যে হৃদয় নিস্পন্দ হয়ে ছিল।
১৫.বেঁচে থাকবার সময় আমাদের কাছে তাদের যতটুকু দাম ছিল,মরে যাবার পর কেবল কাছে নেই বলেই তাদের সে দাম বাড়িয়ে দেওয়া উচিত নিয়।দিলে মরণকে আমরা ভয় করতে আরম্ভ করব।আমাদের জীবনে মৃত্যুর ছায়া পড়বে।আমরা দুর্বল অসুস্থ হয়ে পরব।
১৬.প্রেম অসহ্য প্রাণঘাতী যন্ত্রণার ব্যাপার।প্রেম চিরকাল টিকলে মানুষকে আর টিকতে হত না।
১৭.প্রেম বেঁচে আছে তখন দুজনের একজন মরে গেলে শোক হয়-অক্ষয় শোক হয়।প্রেমের অকালমৃত্যু নেই বলে শোকের মধ্যে প্রেম চিরন্তন হয়ে যায়।কিন্তু প্রেম যখন মরে গেছে,তখন আছে শুধু মায়া,অভ্যাস আর আত্মসান্তনার খেলা,তখন যদি দুজনের একজন মরে যায়,বেশিদিন শোক হওয়া অসুস্থ মনের লক্ষণ।সেটা দুর্বলতা!
১৮.রোমিও জুলিয়েটের ট্রাজেডি তাদের মৃত্যুতে নয়।ওদের প্রেমের অসমাপ্তিতে!
১৯.একমাসের বেশি হৃদয়ে প্রেমকে পুষে রাখতে হলে মানুষ মরে যাবে মানুষ একদিন কি দুদিন মাতাল হয়ে থাকতে পারে।জলের সঙ্গে মদের যে সম্পর্ক,মদের সঙ্গে প্রেমের সম্পর্ক তাই-প্রেম এত তেজী নেশা।
২০.জীবন বড় নীরস।বড় নিরুৎসব।জীবনের গতি শ্লথ,মন্থর।ঝিমিয়ে ঝিমিয়ে মানুষকে জীবন কাটাতে হয়।তার মধ্যে ওই প্রেমের উত্তেজনাটুকু তার উপরি লাভ।


২১.কী কাজ আছে মানুষের?অঙ্ক কষা,ইঞ্জিন বানানো,কবিতা লেখা?ওসব তো ভান,কাজের ছল।পৃথিবীতে কেউ ওসব চায় না।একদিন মানুষের জ্ঞান ছিল না,বিজ্ঞান ছিল না,সভ্যতা ছিল না,মানুষের কিছু এসে যায় নি।আজ মানুষের ওসব আছে কিন্তু তাতেও কারো কিছু এসে যায় না।কিন্তু মানুষ নিরুপায়।তার মধ্যে যে বিপুল শূন্যতা আছে সেটা তাকে ভরতেই হবে।মানুষ তাই জটিল অঙ্ক দিয়ে,কায়দাদিরস্ত ভালো ভালো ভাব দিয়ে,ইস্পাতের টুকরো দিয়ে,আরো সব হাজার রকম জঞ্জাল দিয়ে সেই ফাঁকটা ভরতে চেষ্টা করে।পৃথিবীর দিকে তাকিয়ে দেখ,জীবন নিয়ে মানুষ কী হইচই করছে,কী প্রবল প্রতিযোগিতা মানুষের,কী ব্যস্ততা!কাজ!কাজ!মানুষ কাজ করছে!বৌকে কাঁদিয়ে বৈজ্ঞানিক খুঁজছে নূতন ফরমুলা,আজো খুঁজছে,কালও খুঁজবে।দোকান খুলে বিজ্ঞাপনে বিজ্ঞাপনে চারিদিক ছেয়ে ফেলে,ঊর্ধ্বশ্বাসে ব্যবসায়ী করছে টাকা।ঘরের কোণে প্রদীপ জ্বেলে বসে বিদ্রোহী কবি লিখিছে কবিতা,সারাদিন ছবি এঁকে আর্টিস্ট ওদিকে মদ খেয়ে ফেনাচ্ছে জীবন!কেউ অলস নয়,কুলি-মজুর-গাড়োয়ান,তারাও প্রাণপণে কাজ করছে।কিন্তু কেন করছে?পাগলের মতো মানুষ খালি কাজ করছে কেন?মানুষের কাজ নেই বলে!আসল কাজ নেই বলে!ছটফট করা ছাড়া আর কিছু করার নেই বলে। মানুষের কি নেই তাও মানুষের বুঝবার উপায় নেই।কাজ না পেয়ে মানুষ অকাজ করছে এটা বোঝা যায় কিন্তু তার আসল কাজ কী হতে পারত তার কোনো সংজ্ঞা নেই।এর কারণ কী জান?মানুষ যে স্তরের তার জীবনের উদ্দেশ্য সেই স্তরে নেই।ঈশ্বরের মতো,শেষ সত্যের মতো , আমিত্বের মানের মতো সেও মানুষের নাগালের বাইরে।জীবনের একটা অর্থ এবং পরিণতি অবশ্যই আছে বিশ্বজগতে কিছুই অকারণ হতে পারে না।সৃষ্টিতে অজস্র নিয়মের সামঞ্জস্য দেখলেই সেটা বোঝা যায়।কিন্তু জীবনের শেষ পরিণতি জীবনে নেই।মানুষ চিরকাল তার সার্থকতা খুজবে,কিন্তু কখনো তার দেখা পাবে না।যোগী ঋষি হার মানলেন,দার্শনিক হার মানলেন,কবি হার মানলেন,অমার্জিত আদিমধর্মী মানুষও হার মানলে।চিরকাল এমনি হবে।কারণ সমগ্র সত্তাকে যা ছাড়িয়ে আছে,মানুষ তাকে আয়ত্ত কিরবে কী করে!
২২.তেজী আলোর চেয়ে জ্যোৎস্নার মতো মৃদু আলোতে মানুষের মুখ আরো বেশি সুন্দর হিয়ে ওঠে।


২৩.কাব্য অসুস্থ নার্ভের টঙ্কার!
২৪.হেয়ালি করা সহজ।কারণ তাতে বিবেচনা থাকে না।লোকের মনে কষ্ট দেওয়া পাপ।এমনিতেই মানুষের মনে কত দুঃখ থাকে।
২৫.ঈশ্বরকে কৃপাময় বলে কল্পনা না করে মানুষ ঈশ্বরকে ভালবাসতে পারে না।
২৬.প্রেম একটা অস্থায়ী জোড়ালো নেশামাত্র।
২৭.দুঃখকে ভয় কোরো না, দুঃখ মানুষের দুর্লভতম সম্পদ।
২৮.জীবনে বাহুল্যের প্রয়োজন আছে।কত বিচিত্র উপায়ে মানুষ এ প্রয়োজন মেটায়!
২৯.স্পন্দিত বেদনা প্রাণ ও চেতনার একমাত্র পরিচয়।
৩০.ঘুম তো মরে যাওয়ার সমান,শুধু  সময় নষ্ট।
৩১.'আছেন' বললে ঈশ্বর অস্তিত্ব পান এবং সে অস্তিত্ব মিথ্যা নয়,কারণ 'আছেন' বলাটাই স্ব-সম্পূর্ণ সত্য,আর কোনো প্রমাণসাপেক্ষ সত্যের উপর নির্ভরশীল নয়।
৩২.কল্পনার সীমা আছে।
৩৩.সত্য মিথ্যা কোনো সান্ত্বনাই আত্মোপলব্ধির রূপান্তর দিতে পারে না।
৩৪.ভালবাসা মরে কখন?যখন ভালবাসার শক্তি থাকে না।যে ভালবাসতে পারে না,প্রেম না থাকলে তার কী এসে যায়?
৩৫.আমরা জন্মাই একটা শূন্য,আজীবন মানুষের সাধারণ হৃদয়-মনের সম্পত্তি থেকে তিল তিল করে ঐশ্বর্য নিয়ে সেই শূন্য পূরণ করি।আমরা তাই পরস্পর আত্মীয়,আমরা তাই প্রত্যেকে সমস্ত মানুষের মধ্যে নিজেদের অনুভব করতে পারি।
৩৬.মানুষ মরে,মানবতার মৃত্যু নেই।মানুষের জীবন নিয়ে মানবতার অখণ্ড প্রবাহ চলে বলে জীবনও ব্যর্থ নয়।
৩৭.মেয়েরা কখনো কবি হয় না।পৌরুষ ও কবিত্ব একধর্মী।নিখিল মানবতার মধ্যে নিজেকে জড়িয়ে দিয়ে স্তব্ধ হৃদয়ের একদা-রণিত ধ্বনির প্রতিধ্বনিকে সে কখনো খুঁজে বেড়াতে পারবে না।জগতে তার দ্বিতীয় প্রতিরূপ নেই,সে বৃহতের অংশ নয়;সম্পূর্ণ এবং ক্ষুদ্র।যে বংশপ্রবাহ মানবতার রূপ,সে তা বোঝে না।অতীত ভবিষ্যতের ভারে তার জীবন পীড়িত নয়,সার্থকও নয়।সৃষ্টির অনন্ত সূত্রে সে গ্রন্থির মতো বিগত ও অনাগতকে নিজের জোড়ে যুক্ত করে রাখে না।পৃথিবী যেমন মানুষকে জড় দেহকে দাঁড়াবার নির্ভর দেয়,মানুষের জীবনকে এরা তেমনি আশ্রয় যোগায়।
৩৮.সহজাত সরলতার চেয়ে মনোভিজাত্যের সরলতা বেশি মূল্যবান।একটা ছেলেমানুষি,আর একটা সুশিক্ষা!
৩৯.কষ্ট হওয়া মন্দ কী?তাতে মানুষের দরদ পাওয়া যায়।চোখে না দেখলে কেউ তো বোঝে না কারো কষ্ট আছে কি নেই।
৪০.পরিপূর্ণ প্রেমের অনন্ত দাবি মেটাবার ক্ষমতা আছে একমাত্র অনবিলম্বিত,অনপচয়িত,সুস্থ ও শুদ্ধ যৌবনের।অভিজ্ঞতার প্রেমের খোরাক নেই,মনস্তত্ত্বে ব্যুৎপত্তি প্রেমকে টিকিয়ে রাখার শক্তি নয়।নারীকে নিয়ে একদিনের জন্যও যে খেয়ালের খেলা খেলেছে,তুচ্ছ সাময়িক খেলা,প্রেমের উপযুক্ততা তার ক্ষুণ্ণ হয়ে গেছে।মানুষের জীবনে তাই প্রেম আসে একবার,আর আসে না,কারণ একটা প্রেমই মানুষের যৌবনকে ব্যবহার কিরে জীর্ণ করে দিয়ে যায়।
৪১.নিজের জীবন গুছিয়ে নেওয়া চাই,পরের জীবন সাজিয়ে দেওয়া চাই।
৪২.মৃত্যুর চেয়ে প্রিয়জনকে হারানো বেশি শোকাবহ।
৪৩.শান্তিই মানুষের সব!
৪৪.পুরুষ মানুষেরা হলো গিয়ে সুখের পায়রা।যখন যাতে মজা লাগে তাই তাদের ধর্ম।
৪৫.মনে জোর থাকলে জীবনের সমস্যা কোথায়?
৪৬.সমুদ্রতীর পথ নয় কিন্তু হেঁটে বড় আরাম।পাশে অনন্ত সমুদ্রের গা ঘেঁষে সমুদ্রতীরও কোথায় কতিদূর চলে গেছে,শেষ নেই।সঙ্গী নিয়ে নিঃশব্দে হাঁটবার সুবিধাও এইখানে,সমুদ্রের কলরব নীরবতাকে প্রচ্ছন্ন করে রাখে,পীড়ন করতে দেয় না।
৪৭.তোমার পাপ তোমার মহৎ চিত্তের মহাব্যাধি!


Comments