দৈনন্দিন জীবনে বিজ্ঞান
{ভূমিকা; বিজ্ঞান
কী?; আধুনিক বিজ্ঞান; বিস্ময়কর বিজ্ঞান; চিকিৎসায় বিজ্ঞান; কৃষিশিল্পে
বিজ্ঞান; বিজ্ঞানের অকল্যাণ; উপসংহার}
ভূমিকা: “হে মোর রহস্যময়ী প্রকৃতিসুন্দরী
আপনারে আচ্ছাদিয়া দিবস শর্বরী
অঞ্চলে রেখেছ ঢাকি
অমৃত রেকাব
আর
নয়,প্রিয়া মোর,উতারো নেকাব।“
যা না হলে আমরা বাঁচি না, সেই জিনিসের গুরুত্ব নিয়ে কথা বলার কোন প্রয়োজন
নেই। আসলে বিজ্ঞান আজ এমন এক জায়গায় উন্নীত হয়েছে যেখানে একজন প্রেমিক তার
প্রেমিকাকে অবলীলায় বলতে পারে, "নামিয়ে ফেলো তোমার অবগুন্ঠন-ঢেকে রাখার কিছুই
নেই।" অতএব সহজেই অনুমেয় বিজ্ঞানের জয়যাত্রার কথা। যে প্রকৃতির হাতে মানুষ ছিল খেলার
পুতুল, যে প্রকৃতির বিরুদ্ধশক্তির সাথে মানুষকে প্রতিনিয়ত সংগ্রাম করে চলতে
হচ্ছে, সেই প্রকৃতির অন্ধ শক্তির উপর জয়ী হওয়ার প্রয়োজনেই একদিন সৃষ্টি হয়েছিল
বিজ্ঞান। পৃথিবীর বহু ব্যক্তি মানবকল্যাণের জন্য ডুব দিয়েছিল প্রকৃতির অতলান্ত
রহস্য সাগরে। সেই রহস্যাবরণ উন্মোচন করে মানুষের প্রতিভা আবিষ্কার করেছে প্রকৃতির কত
গোপন সম্পদ ও শক্তি। জলে, স্থলে, অন্তরীক্ষে আজ মানুষের দুর্বার গতি। আদিম জ্ঞানকে
পেছনে ফেলে বিজ্ঞানের কল্যাণে মানুষ আজ সভ্যতার অকল্পনীয় উন্নয়নে সমৃদ্ধশালী। মানুষের
দৃষ্টিভঙ্গি, চিন্তাচেতনায় পরিবর্তন নিয়ে এসেছে এই বিজ্ঞান।
বিজ্ঞান কী?: বিজ্ঞান বা Science
শব্দটির উৎপত্তি "Scientia" থেকে। "Scientia" অর্থ জানা বা শিক্ষা করা। বিজ্ঞানী ভ্যালেরির মতে, "বিজ্ঞান হলো কতগুলো
সাফল্যমণ্ডিত ব্যবস্থা ও ধ্যান-ধারণার সংগ্রহ।" প্রমথ চৌধুরীর মতে, "বিজ্ঞান শুধু
একটি বিশেষ জ্ঞানের নাম নয়, একটি বিশেষ পদ্ধতি অবলম্বন করে যে জ্ঞান লাভ করা যায়
আসলে তার নামই হচ্ছে বিজ্ঞান।" হারবার্ট স্পেন্সারের মতে, "বিজ্ঞান হলো সঙ্ঘবদ্ধ
জ্ঞানের সমষ্টি।"বিজ্ঞানী মাদাম কুরি বলেছেন, "আমার চোখে বিজ্ঞান হলো অনিন্দ্য
সুন্দর।" গবেষণাকার্যে সফল বিজ্ঞানীদের কর্মপ্রচেষ্টা কল্পকাহিনীকেও হার মানায়!
বর্তমান যুগ বিজ্ঞানের যুগ। বর্তমান সভ্যতা বিজ্ঞানের দান। প্রখ্যাত মনীষী
অলব্রাইট হাক্সলি তাঁর Bravo New World গ্রন্থে বিজ্ঞানের এমন
অগ্রগতি কল্পনা করেছেন যে, "এমন এক সময় আসবে যখন মানুষ সৃষ্টি হবে যন্ত্রের
সাহায্যে এবং যন্ত্রজাত মানুষেরাই সবসময় পৃথিবীর এ প্রান্ত থেকে ও প্রান্তে ঘুরে
আসবে।" তার সেই কল্পিত ভবিষ্যৎ বাস্তবায়িত করার পথ ধরেই বোধ হয় এ যুগের রোবট তৈরি
হচ্ছে অতি তৎপরতার সাথে! সভ্য সমাজের সর্বত্রই বিজ্ঞানের গৌরবময় উপস্থিতি। নাগরিক
সভ্যতার সামান্য অংশটিও অবৈজ্ঞানিক নয়। এর রাজপথ, যানবাহন, অট্টালিকা সবই বিজ্ঞানের
আশির্বাদপুষ্ট। সুইচ টিপলেই আলো জ্বলে, পাখা ঘোরে, গান বাজে, ছবি আসে, নিমিষেই ওড়া যায়
নীলাকাশে, ভাঙা হাড় জোড়া লাগে! এ সবই সম্ভব হয়েছে বিজ্ঞানের বদৌলতে। ধেয়ে এগিয়ে চলেছে
জীবন। বিজ্ঞানের রথে ভর করে মানুষের জীবনে এখন অনেক পরিবর্তন এসেছে। তাই বলা যায়, "এ
যুগ বিজ্ঞানের যুগ, এ যুগ প্রযুক্তির যুগ।" মহাবিজ্ঞানী আলবার্ট আইনস্টাইন
বলেছেন-
"বিজ্ঞানই সত্য। বিজ্ঞানই উপযুক্ত। বিজ্ঞান আপনার নিরবিচ্ছিন্ন বন্ধু।
বিজ্ঞান সর্বদা সৃষ্টিশীল।"
বিজ্ঞান ছাড়া জীবন অসম্ভব। ধরা যাক, আমার এ লেখার কক্ষটারই কথা। এর
চেয়ার, টেবিল, দরজা, জানালা, লাইট, ফ্যান, কাগজ, কালি, কলম সবই বিজ্ঞানের সুন্দর সংস্পর্শে
পরিপূর্ণ।জামা, কাপড়, জুতা,মোজা,এমনকি একটু আগে পান করা বেভারেজ ও হটডগ সবই
বিজ্ঞানের ছোয়ায় ধন্য।
বিস্ময়কর বিজ্ঞানঃ ইংরেজি ভাষায়
একটা প্রবাদ আছে-‘’Necessity is the mother of invention’’-প্রয়োজন হলো আবিষ্কারের
জননী।আর,প্রয়োজনের তাগিদেই বিজ্ঞান আবিষ্কার করছে নানা বিস্ময়কর বস্তু।আধুনিক
বিজ্ঞান সময় ও দূরত্বকে জয় করেছে।জেমস ওয়াট স্টিম ইঞ্জিন ও জর্জ স্টিফেনসন রেলগাড়ি
আবিষ্কার করেছেন।উড়োজাহাজের সাহায্যে আমরা ঘন্টায় তিনশত মাইলেরও বেশি পথ সহজেই
অতিক্রম করতে পারি।মাইকেল ফ্যারাডে বিদ্যুৎ আবিষ্কার করেন ও টমাস আলভা এডিসন
বিদ্যুৎকে কাজে লাগান টেলিফোন,রেডিও,টেলিভিশনের উৎকর্ষ সাধনে।মূলত এ যন্ত্রগূলো
বিদ্যুৎ তরঙ্গের রহস্যময় শক্তির উপর দাঁড়িয়ে আছে,
চিকিৎসায় বিজ্ঞানঃ’’বিজ্ঞান
বিশ্বসভ্যতায় অনেক কিছু উপহার দিয়েছে।এ বিস্ময়ের অন্যতম হলো আধুনিক
চিকিৎসাব্যবস্থা।“-হেনরি ডেভিড
আমাদের কর্মমুখর জীবনের অসুস্থ্য মূহুর্তগুলো নিতান্তই চিকিৎসা-বিজ্ঞানের উপর
নির্ভরশীল।সহজ মরণকে বিজ্ঞান এখন বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখায়,মুমূর্ষু রোগী আশ্চর্য সব
ঔষধের গুণে বেঁচে আছে,ভরসা পাচ্ছে আরও অধিক কাল পৃথিবীকে উপভোগ করার।অলৌকিক
শোনালেও সত্যি যে,প্লাস্টিক সার্জারির মাধ্যমে মানুষের মুখের চেহারা আরও আকর্ষণীয়
হয়ে উঠছে।পেনিসিলিন,স্ট্রেপটোমাইসিন প্রভৃতি আবিষ্কৃত হওয়ায় লক্ষ লক্ষ মানুষ
নানারূপ ব্যধির হাত থেকে রক্ষা পাচ্ছে।সম্প্রতি বিজ্ঞানের অপার মহিমায় পেনিসিলিনের
মতো ক্লোরিন নামে আরেকপ্রকার জীবাণুনাশক আবিষ্কৃত হয়েছে।মাদাম কুরির আবিষ্কার
রেডিয়ামই আজ দুরারোগ্য ক্যান্সার রোগীর মনে জাগিয়েছে বাঁচার আশা।তাছাড়া জন গ্রে এর
ভ্যাক্সিন ও লুই পাস্তুরের ইনজেকশনের কথা সবারই জানা।
কৃষিশিল্পে বিজ্ঞানঃ ‘’বহুদিন উপবাসী
নিঃস্ব জনপদে
মাঠে
মাঠে আমাদের ছড়ানো সম্পদ
কাস্তে দাও আমার এ
হাতে।‘’-সুকান্ত ভট্টাচার্য
বিজ্ঞান কৃষিতে এক যুগান্তকারী বিপ্লব ঘটিয়েছে।সারের ব্যবহারে ফলন
বেড়েছে।কীট-পতঙ্গ নিপাত করছে ঔষধ,মরুভূমি পরিণত হচ্ছে মনোহর উদ্যানে,বিরানভূমি
জনারণ্যে পরিণত হচ্ছে।পার্বত্য এলাকা হচ্ছে সমভূমি।উন্নত সেচ
ব্যবস্থা ও চাষাবাদের ফলে কৃষিক্ষেত্র অনেক উন্নতি লাভ করেছে।
বিজ্ঞানের অকল্যাণঃআমাদের
নিত্যজীবনে বিজ্ঞান শুধু আশীর্বাদই বয়ে আনেনি;অভিশাপও এনেছে।যন্ত্রের উপর নির্ভর
করত্যে গিয়ে মানুষ দিনদিন শ্রমবিমুখ হয়ে পড়ছে।অবস্থা দেখে মনে হয় মানবজন্মের সব
গৌরব হারিয়ে আমরা যন্ত্রের দাস হয়ে উঠছি।এছাড়া বিজ্ঞানের উন্নতির সাথে সাথে যেসব
মারণাস্ত্র তৈরি হচ্ছে তা শান্তিকামী মানুষকে আতঙ্কগ্রস্থ করে তুলছে।দুটি
মহাযুদ্ধের ধ্বংসলীলাই এর জ্বলন্ত প্রমাণ।বিজ্ঞানের ধ্বংসাত্মক শক্তি ও
ক্রমবর্ধমান প্রসারে ভীত হয়ে বিজ্ঞানী আইনস্টাইন আক্ষেপ করে বলেছিলেন,”পৃথিবী এক
অনিবার্য ধ্বংসের মুখে এগিয়ে চলছে।“
একই সাথে যা আশীর্বাদ তা যে অভিশাপও হতে পারে তারে জ্বলন্ত প্রমাণও আছে
অনেক।আলফ্রেড নোবেল পাহাড়-পর্বত ডিঙিয়ে মনুষ্য যাতায়াতের টানেল কিংবা খনি থেকে
উত্তোলনের জন্য যে ডিনামাইট আবিষ্কার করেন;পরবর্তীতে তাই অসংখ্য প্রাণ সংহার
করেছে।যে পারমানবিক শক্তি মানুষের শক্তিকে বহুগুণে বৃদ্ধি করেছে,তাই আবার নাগাসাকি
ও হিরোশিমায় লাখ লাখ লোক হত্যা করেছে।আনবিক শক্তিতে পরিচালিত সাবমেরিন,নটিলান
লেলিন তুষারাবৃত আর্কটিক অঞ্চলের পথ পরিষ্কার করছে।নানা দেশে জ্বালানির অভাব দূর
করছে এবং শান্তির কাজে ব্যবহৃত হচ্ছে।আবার তার অপব্যবহারও হচ্ছে ব্যপক।বিজ্ঞানের এ
অপব্যবহার নিষিদ্ধ করার জন্য মানুষের বুদ্ধির উদ্রেক হোক,তার জন্য নিরন্তর প্রচার
আবশ্যক।সম্মিলিত রাষ্ট্রপুঞ্জের শক্তি সংহত হলে তবেই তা সম্ভব হবে।নতুবা দুর্বলের
উপর অত্যাচারেরে ক্ষেত্রে বিজ্ঞানের অপব্যবহার হবেই।
উপসংহারঃ”There is no unmixed
blessings on Earth.”
ভালোর পাশাপাশি মন্দের উপস্থিতি আলো-আধারের মতো লুকোচুরি খেলবেই।দৈনন্দিন
জীবনে বিজ্ঞান তাই অনেক ভালোর সাথে কিছুটা অপ্রীতিকর বৈকি।পানি ও বাতাসকে বাদ দিলে
যেমন জীবনের কাজকর্ম স্তব্ধ হয়ে যায়,তেমনই বিজ্ঞানকে বাদ দিলেও সভ্য জগত প্রাণহীন
ও স্পন্দনহীন হয়ে পড়বে।তাই বিজ্ঞানের অকল্যাণকর দিকগুলোকে দূরে ঠেলে এর সুন্দর
অগ্রযাত্রাকে আরো ত্বরান্বিত করতে হবে।তবেই বিজ্ঞানের মাধ্যমে আমাদের দেশ ও জীবন
গড়ে উঠবে সুন্দরভাবে,দেখা দিবে শাশ্বত কল্যাণ,সূচিত হবে কল্যাণের অভিমুখী
বিজ্ঞানের জয়যাত্রা।
Thank you bhijan
ReplyDeleteWelcome
Deleteসাহায্য করার জন্য ধন্যবাদ।রচনাটি অনেক সুন্দর হয়ে।
ReplyDeleteআপনাকেও মত প্রকাশ করে অনুপ্রেরণা জোগানোর জন্য অনেক ধন্যবাদ!
DeleteMany many Thanks.
ReplyDeleteMany many Thanks.
ReplyDeleteNice essay.Thank you
ReplyDeleteThanks for help us But it should be some more. Please make it some more long.
ReplyDeleteThanks for creating the essay with poets and quotes
ReplyDeleteThanks for creating the essay with poets and quotes
ReplyDeleteOutstanding
ReplyDelete