Min menu

Pages

latest news

বুক রিভিউ - কপোট্রনিক সুখ দুঃখ(মুহম্মদ জাফর ইকবাল)

বাংলাদেশের শুধুমাত্র একজন সায়েন্স ফিকশন লেখকের নাম আপনাকে বলতে বলা হইলে আপনি কার নাম বলবেন? আমার জন্য উত্তরটা সহজ। আর নামটাও সবার জানা। মুহম্মদ জাফর ইকবাল!

কপোট্রনিক সুখ দুঃখ, মুহম্মদ জাফর ইকবালের প্রথম বই।

বইটার প্রেজেন্ট মার্কেট প্রাইস মেয়বি ১০০-১৫০ টাকা।যদিও বইটা আমি খুব সম্ভবত বিশ টাকা দিয়া কিনছিলাম। আই মিন গরিবস তো,পুরান বই কিনি।✌

আমি জানি আপনে বইটার নামের মানেই বোঝেন নাই এখনো। কপোট্রন মানে হইলো রোবটের ব্রেইন।আর সুখ দুঃখ কী জিনিস তা তো জানেনই। মানে বইটা এমন সব রোবটদের নিয়া যাদের ব্রেইন সুখ দুঃখ আনন্দ ভালোবাসা এইরকম সব মানবিক আবেগ ফিল করতে পারে। আবেগ...👀

সেই উনিশশো কটকটি সালের মানে ১৯৭৬ সালের সায়েন্স ফিকশন হইলেও বইটা আপনার একদমই পুরানো লাগবে না। আর আমি যদি লেখকের নাম মুইছা আপনারে বইটা পড়তে দেই তাইলেও আপনে জীবনেও গেস করতে পারবেন না যে এইটা আসলেই জাফর ইকবালের লেখা বই!

আমি বুঝি না মাত্র চব্বিশ বছর বয়সে কেও কেমনে এই রকমের একটা বই প্রকাশ করতে পারে! এই বইটা পড়ার পরেই আমি আরো দুই লাইন বেশি বিশ্বাস করা শুরু করছি যে Age is just a number! যদিও বইটা সায়েন্স ফিকশন, কিন্তু জীবন নিয়া গভীর সব চিন্তাভাবনা খেয়ালি বিজ্ঞানীর মাধ্যমে ফুটায়া তুলছেন লেখক। আপনি যদি লেখকের রিসেন্ট বইগুলা নিয়া বিতৃষ্ণায় ভুইগা থাকেন তাইলে আমি আপনাকে চোখ বন্ধ কইরা এই বইটা পইড়া দেখতে বলবো।

এই বইটা মূলত ছোট ছোট সাতটা সায়েন্স ফিকশনের গল্প।

সাতটা গল্পই জোস। কিন্তু আমার কাছে  সবচেয়ে ভাল্লাগছে "কপোট্রনিক অস্ত্রোপচার"। অনেক ইমুশুনাল ছিল তো তাই as you know আমি বাংলা মুভির অনেক বড় ফ্যান!😎

এখন বইটার গল্পগুলা নিয়া কিছু বলি।

প্রথম গল্পটা নিয়া একটু বলবো তার আগে টিস্যু নিয়া বসেন। বইটার মূল ক্যারেক্টার হইলো এক খেয়ালী বিজ্ঞানী। সে ডিপ্রেশনে পইড়া একটা মানবিক আবেগসম্পন্ন রোবট বানানোর ডিসিশন নেয়। আর বানায় ফেলে পৃথিবীর প্রথম মানবিক আবেগসম্পন্ন রোবট। এই রোবট পরে হের বউয়ের উপ্রে ক্রাশ খায়, তারে লাভলেটার দেওয়া শুরু করে, আর এই বিজ্ঞানী সাহেবের বউ বুলা রোবটটার হার্ট ব্রেক করে।তারপর রোবটটা নিজের যান্ত্রিক শরীর নিয়া ডিপ্রেশনে যাইয়া সুইসাইড করে। আহারে...

আর গল্পগুলা নিয়া কিছু বলুম না নাইলে পরে আপনে আর বইটা পড়তে চাইবেন না। আমি চাই আপনি বইটা একবার হইলেও পড়েন। খুবই জোস আর ছোট তো বই খুব তারাতারি শেষ হয়া যাবে। মন ভালো হবে বইটা পইড়া!

এখন আমাল ফেবারিত ইমুশুনাল গল্পতা একতু বলি।

বুলা একটা Accident এ মস্তিষ্কে মারাত্মকভাবে আঘাত পায়। বুলাকে বাঁচানোর কোন way আর ছিল না।তখন আমাদের প্রোট্যাগনিস্ট একটা রোবটরে সাথে নিয়া অনেক অনেক অনেক জটিল একটা অস্ত্রোপচার কইরা বুলার ব্রেইনের জায়গায় একটা কপোট্রন বসায়া দেয়। তারপর বুলা বেঁচে ওঠে। ওরে বলা হয় যে তোমার মেমোরি লস হইসে। পরে সবকিছুর সাথে বুলা মানায়া নেয় অথচ ও জানেই না যে ওর মাথায় ব্রেইনের জায়গায় একটা যান্ত্রিক কপোট্রন। পরে একদিন একটা মেটাল ডিটেক্টরে ওর মাথায় যে যন্ত্রপাতি আছে এইটা ধরা পরে। তারপর ও সব জেনে যায়, সে অনেক ইমোশনাল হয়া যায় যে সে আসলে মানুষ না, একটা রোবট! আমাদের বিজ্ঞানীকে আইসা এইসব ইমোশন ঢাইলা দেয়, উনিও অনেক কিছু বুঝায়। 

"""তোমার ফুল বডি মানুষের শুধু ব্রেইন মানুষের না বইলাই কি তুমি রোবট হয়া গেলা!অনেকেই তো হাত পা রিপ্লেসমেন্ট করে, যান্ত্রিক হাত পা লাগায়, তাই বইলা কি তারা আর মানুষ থাকে না!? হইলোই না তোমার মাথায় একটা রোবটের ব্রেইন। তোমার হাত পা চুল নাক ঠোঁট সবকিছু তো আমার বুলার! তাইলে তুমি ক্যামনে নিজেকে বুলা হিসেবে অস্বীকার করো হুম!😥"""

সরি আমার ভিত্রে ওর আত্মা ভর করছিলো।

যাই হোক...

বাকি গল্পগুলাও অনেক অনেক ইন্টারেস্টিং। কোথাও মানবিক আবেগসম্পন্ন রোবটরা মিলা স্বাধীনতার জন্য বিদ্রোহ করে। কোথাও বা আমাদের বিজ্ঞানী মারা যাওয়ার মতো অবস্থায় চলে যায়। টোপনরে রোবটরা আটকায়া রাখে।

বইয়ের লাস্টে আপনে একটা শক খাবেন...

যাই হোক ২,বইয়ের গল্প টল্প এইখানেই শেষ!

বইটা নিয়া একটা মজার কাহিনী আছে। সাপ্তাহিক বিচিত্রায় বইটার প্রথম গল্প "কপোট্রনিক ভালোবাসা" প্রকাশ হওয়ার পর কিছু পাঠক বলে যে এই গল্প বিদেশি গল্পের থেকে চুরি করা। তারা বিশ্বাসই করতে পারে নাই যে এই ধরণের গল্প আমাদের দেশী কেও লেখতে পারে! পরে জাফর ইকবাল প্রমাণ করার জন্য পরপর কয়েকটা সংখ্যায় এই ধরণের আরো কয়েকটা গল্প লিখা ছাপায়। তখন সবাই বুঝতে পারে যে জাফর ইকবালের পক্ষে এই ধরণের মৌলিক গল্প আসলেই লেখা সম্ভব! বইটা জাহানারা ইমাম পড়ছিলো আর অনেক প্রশংসাও করছিল।

যাই হোক,আর বকবক করতে পারবো না।বইটা পইড়েন হ্যাঁ?

Bye!

বইটার রিভিউ ইউটিউবেও আছে, চাইলে দেখতে পারেন...




Comments