Min menu

Pages

latest news

বাদশাহ নামদার। হুমায়ূন আহমেদ। বুক রিভিউ। Badshah Namdar । Humayun Ahmed । Book Review ।

বাদশাহ নামদার হুমায়ূন আহমেদের লেখা ইতিহাসের ছায়ায় সম্রাট হুমায়ুনের জীবনকাহিনী।

ইতিহাসের বই পড়তে গেলে সচরাচর আমরা দুই পেইজ পড়ে তিনদিন রেস্ট নিয়ে তারপর পরের দুই পেইজ পড়ি, কিন্তু এই বইটির মৌলিকতা হলো বইটি ইতিহাসের চরিত্রগুলোকে উপন্যাসের ঢঙে আমাদের সামনে উপস্থাপন করেছে।

এখন আপনি বলতে পারেন এইরকম আরো কত বই-ই তো আছে যেটা ইতিহাসকে কেন্দ্র করে উপন্যাসের আদলে গড়ে উঠেছে,তাহলে আমি বলবো আপনাকে বইটি একবার পড়ে দেখবার জন্য।কারণ উপন্যাসের লিখনশৈলী আপনাকে আমি বলে কখনোই বোঝাতে পারবো না।

ব্রো,এইটা হুমায়ূন আহমেদ!!

বাদশাহ নামদার
Source: www.amarbooks.org

ইতিহাসভিত্তিক উপন্যাস হয়েও বইটি অতিমাত্রায় সরস এবং হুমায়ূন আহমেদ নিজের লিখনভঙ্গি কোনোভাবে পরিবর্তন না করেই যেভাবে তুলে এনেছেন সম্রাট হুমায়ুনকে তা বিস্ময়কর।আমি হুমায়ূন আহমেদের খুবই একনিষ্ঠ পাঠক,হিসাব করে দেখেছি প্রায় সবই পড়ে ফেলেছি,সেই অভিজ্ঞতা থেকে বলতে পারি, হুমায়ূন সাহিত্যকে বিচার করতে হলে বাদশাহ নামদার একটি অবশ্যপাঠ্য বই।

হুমায়ূন আহমেদ কেন এই বইটি লিখলেন,সম্পর্কতা কি শুধুই নামের মিলের কারণে?

বইটির ভূমিকা থেকে কিছু অংশ পড়া যেতে পারে..

"আমার নিজের নাম হুমায়ূন হওয়ায় ক্লাস সিক্স-সেভেনে আমার মধ্যে শুধুমাত্র নামের কারণে এক ধরণের হীনমন্যতা তৈরি হয়।সেই সময়ের পাঠতালিকায় মোঘল ইতিহাসের খানিকটা ছিল,তাতে শের শাহ'র হাতে হুমায়ূনের একের পর এক পরাজয়ের কাহিনী।হুমায়ূনের পরাজয়ের দায়ভার খানিকটা আমাকে নিতে হয়েছিল।ক্লাসে আমাকে ডাকা হতো 'হারু হুমায়ূন'।কারণ আমি শুধু হারি।আমি কার কাছে হারি?মহান সম্রাট শের শাহ'র হাতে-যিনি ঘোড়ার ডাকের প্রচলন করেন,গ্রান্ডট্রাংক রোড বানান।আমি শুধু পালিয়ে বেড়াই।হায়রে শৈশব!

এমন হওয়া অসম্ভব না যে শৈশবের হীনমন্যতাও বাদশাহ নামদার লিখতে খানিকটা ভূমিকা রেখেছে।"


বইটি প্রকাশ হয়েছে হুমায়ূন আহমেদের মৃত্যুর একবছর আগে।

বর্তমানে রকমারির ঐতিহাসিক উপন্যাস ক্যাটাগরিতে তৃতীয় বেস্টসেলার বই এটি।( মজার ব্যাপার হচ্ছে প্রথমটিও হুমায়ূন আহমেদেরই,দেয়াল।)

সম্রাট হুমায়ূন ইতিহাসের বিচিত্র একজন চরিত্র।হুমায়ূন আহমেদের উপন্যাসে আমরা যেসব বিচিত্র চরিত্র দেখতে অভ্যস্ত সম্রাট হুমায়ূন সেরকমই একজন ।তার জীবন রহস্যময়তায় ভরা।

Yo bro Samrat Humayun!!
Source: www.en.wikipedia.org


একজন সম্রাট হয়েও তার নানান বিষয়ে তার কৌতুহল এবং খামখেয়ালিপনা আপনাকে অবাক করবে।

হুমায়ূনের চিরশত্রু শের শাহ যে তাকে হিন্দুস্তানের সিংহাসন থেকে বিচ্যুত করেছিলেন তিনিও  নিজে বলেছিলেন যে হুমায়ুনকে কোনো অবস্থাতেই গ্রেফতার বা হত্যা করা যাবে না।কারণ হিসেবে তিনি বলেছিলেন,"তিনি মহান মানুষদের একজন ।এই মানুষটির অন্তর স্বর্ণখণ্ডের মতো উজ্জ্বল।সেখানে কলুষতার কণামাত্রও নাই।"

Chilling Akbor The great!
Source: www.dailyasianage.com



উপন্যাসের শুরু হয় সম্রাট হুমায়ূনের বাবা সম্রাট বাবরকে দিয়ে আর শেষ হয় তার ছেলে আকবর দা গ্রেটকে দিয়ে।

সেই সময়ের নিয়ম অনুযায়ী সিংহাসনে বসার পর অন্য ভাইদের মেরে ফেলা হতো।কিন্তু হুমায়ূন এমন কিছু করেন নি, বরং তার ভাইদের ক্রমাগত অন্যায়-বিদ্রোহ সহ্য করে বারবার শাস্তির হাত থেকে অব্যাহতি দিয়েছেন।

মানবিক দৃষ্টিভঙ্গীর জন্য বারবার নানান বিপর্যয়ের মধ্যে পরতে হয় তাকে।এমনকি হিন্দুস্তানের সিংহাসনও হারাতে হয়।

সাতার না জেনেও সারাজীবন তাকে সাতরাতে হয়েছে জীবন স্রোতের বিপরীতে।কিন্তু,"জাদুকরী ক্ষমতার হুমায়ূনের মতো মানুষরা যা কিছু হারায় সবই ফিরে পায়।মানুষের ভালোবাসার কারণে ফিরে পায়।"

হুমায়ূনের ইতিহাসের সাথে যার নাম না বললেই নয় সে হলো বৈরাম খাঁ।নিজের জীবন দিয়ে আগলে রেখেছিলেন হুমায়ূনকে।হুমায়ূনের চরম দুঃসময়েও সে চলে যায় নি,যখন সবাই তাকে ত্যাগ করেছে তখনো সে বুদ্ধি দিয়ে সামরিক দক্ষতা দিয়ে সাথে থেকেছে হুমায়ূনের।অনেকটা তার একনিষ্ঠতার জন্যেই হুমায়ুন মোঘল সিংহাসন আবারও ফিরে পায় আর সিংহাসনে বসেও তার নিজের পছন্দের স্বাভাবিক শিশুসুলভ জীবনযাপন করতে পেরেছিলেন।

তবে "প্রদীপের নিচেই থাকে অন্ধকার"।

হুমায়ূনের কথামতো হুমায়ূনের মৃত্যুর পর আকবর দা গ্রেটকে সিংহাসনে বসানোর উপযুক্ত করে গড়ে তোলেন বৈরাম খাঁ।কিন্তু সেই আকবরের গুপ্তঘাতকদের হাতেই মৃত্যুবরণ করতে হয় অমর এই  সেনাপতিকে!

হুমায়ূনের লেখা শের,

অশ্ব অশ্বারোহীর বন্ধু নয়

যেমন বন্ধু নয় বায়ু,মেঘমালার।

বন্ধু হবে এমন যাদের সঙ্গে কখনো দেখা হবে না।

দুজনেই থাকবে দুজনের কাছে অদৃশ্য।

দৃশ্যমান থাকবে তাদের ভালোবাসা।


বইটি নিয়ে খুব গভীর আলোচনায় যেতে চাই না।তবে অনেকেই বলে থাকেন যে লেখক হুমায়ূনের একটা প্রচ্ছন্ন ছায়া পরে থাকতে পারে সম্রাট হুমায়ূনের উপর,কিন্তু আমি সম্রাট হুমায়ূনকে নিয়ে খুব বেশি কিছু পড়ি নি তাই জানি নাই বলে এই প্রসঙ্গে মন্তব্য করছি না।

* তবেগুগলে সব আর্টিকেলে দেখলাম সম্রাট হুমায়ুনের নামের বানানে "য়" এর নিচে হ্রস্ব উ কার,কিন্তু হুমায়ূন আহমেদ তার বইতে ব্যবহার করেছেন দীর্ঘ উ কার।

ঠিক যেন তার নিজের নামের মতো...👀


বইটির পাতায় পাতায় উঠে আসে ইতিহাসের পরিচিত সব মুখ,সময় টেনে নিয়ে যায় মোঘল আমলে।

রাজা যায় রাজা আসে।প্রজাও যায়,নতুন প্রজা আসে।কিছুই টিকে থাকে না।ক্ষুধার্ত সময় সবকিছু গিলে ফেলে,তবে গল্প গিলতে পারে না।

গল্প থেকে যায়!বাদশা নামদারের গল্প এখানেই শেষ।

বইটি আপনার অবশ্যই এবং অবশ্যই পড়া উচিত।নিয়তির অদ্ভুত খেলায় নিজেকে হারিয়ে ফেলবেন এই নিশ্চয়তা আমি আপনাকে দিচ্ছি।কিনে পড়ুন,বন্ধুর বই ধার করে পড়ুন,বা আমার মতো কোনো লাইব্রেরি থেকে নিয়ে পড়ুন,কিন্তু পড়ুন।তবে একটি পরামর্শ থাকবে বইটি রাত দশটার পরে পড়া শুরু করবেন না,নাহলে আর সেই রাত্রে আপনি ঘুমুতে পারবেন না।বইটি পড়া শেষ না করে আপনার কিছুতেই ঘুম আসবে না,আর যদি শেষ করেও ফেলেন তাও ঘুমাতে পারবেন না,গল্প আপনাকে সেদিন আর ঘুমাতে দেবে না!


পৃষ্ঠা:২৩২

প্রকাশক:অন্যপ্রকাশ
মূল্য:৪৫০ টাকা
প্রাপ্তি:বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের ভ্রাম্যমাণ লাইব্রেরি

ব্যক্তিগত রেটিং:৮/১০

Comments