Min menu

Pages

latest news

বিবর্তন ও মানুষ । আরিফ শাহরিয়ার ।

পৃথিবীতে আজকের যে জীবজগৎ আমরা দেখি তা একদিনে তৈরি হয় নি।কোটি কোটি বছরের বিবর্তনের মাধ্যমে সৃষ্টি হয়েছে এই অপরূপ জীবজগৎ।

পৃথিবীর সব জীবের দিকে তাকালে একটি বিষয় খুবই ভালোভাবে বোঝা যায় যে প্রতিটি জীব কখনোই পৃথকভাবে তৈরি হয় নি এবং তারা আকাশ থেকেও টুপ করে মাটিতে পরে নি।বরং একটি জীব থেকে অপর জীব সৃষ্টি হওয়ার ক্ষেত্রে 'Survival of the fittest' ফর্মুলা অনুসৃত হয়েছে।যোগ্যরাই টিকে থাকে!

অতীত এবং বর্তমানের জীবের গঠনে প্রচুর পার্থক্য রয়েছে।একই পূর্বপুরুষ হতে বিবর্তনের মাধ্যমে স্থান-কাল-প্রভাবকের পার্থক্যে বিভিন্ন ধরণের পৃথক জীব উৎপন্ন হয়েছে।আর এভাবেই তৈরি হয়েছে বর্তমানের প্রায় ১৩ লাখ প্রাণী এবং প্রায় ৪ লাখ উদ্ভিদ প্রজাতির আমাদের এই জীবজগৎ।

সাড়ে চার বিলিয়ন বছর পূর্বে উত্তপ্ত পৃথিবী থেকে কালের পরিক্রমায় একসময় যখন সমুদ্র তৈরি হলো তখনই জীবনের উৎপত্তি হওয়ার সম্ভাবনা বহুগুণ বেড়ে গেল।পানির অপর নাম যে জীবন,আর জীবনের জন্য যে পানি অপরিহার্য!এই সমুদ্রের পানিতেই ঘটেছিল মহাবিশ্বেরর এক আশ্চর্যজনক অধ্যায়ের সূচনা!

তখনকার পৃথিবীর প্রভাবকে সমুদ্রে বিভিন্ন যৌগ মিলিত হয়ে অ্যামাইনো অ্যাসিড এবং নিউক্লিক অ্যাসিড উৎপন্ন হওয়া ছিল একটি স্বাভাবিক ঘটনা।পরবর্তীতে ল্যাবরেটরিতেও এটি পরীক্ষা করে প্রমাণ করা হয়েছে।এই দুই অ্যাসিড মিলিত হয়ে নিউক্লিওপ্রোটিন অণুর সৃষ্টি হয়।এই অণু ক্রমেই নিজেরা নিজেদের প্রতিরূপ গঠনের ক্ষমতা অর্জন করে এবং সূত্রপাত হয় আশ্চর্য জীবনের!এই নিউক্লিওপ্রোটিন হতে সৃষ্টি হয় প্রোটোভাইরাস এবং তা থেকে হয় ভাইরাস।এরপর আসে ব্যাকটেরিয়া।একসময় উদ্ভব হয় প্রোটোজোয়া।এই ক্রমবিকাশের মাধ্যমে বিবর্তন চালু হয়ে যায়।ব্যাকটেরিয়ার ছিল আদি নিউক্লিয়াস,প্রোটোজোয়াতে পাওয়া গেল প্রকৃত নিউক্লিয়াস।একদিকে কিছু জীবদেহে ক্লোরোফিল উৎপন্ন হলো এবং তা থেকে সালোকসংশ্লেষণ শুরু হলো।উদ্ভব হলো নানান আশ্চর্য সব জীবের!দুটি শাখায়  বিভক্ত হয়ে গেল বিবর্তন।একদিকে বিবর্তিত হতে হতে উন্নততর হতে থাকলো উদ্ভিদজগৎ এবং অপরদিকে প্রাণীজগৎ।বহু জটিল জালের মাধ্যমে এগিয়ে চলে বিবর্তন।এখনো চলছে।তবে সাধারণ বিবর্তন একটি খুবইন ধীর প্রক্রিয়া।এর মাধ্যমে সরল জীব থেকে ধীরে ধীরে উৎপত্তি ঘটেছে মানুষসহ আরও নানা জটিল গাঠনিক জীব!

কালের বিবর্তনে প্রকৃতির কোলে বেড়ে উঠতে থাকলো নানান ধরণের জীব।কিন্তু যারা প্রকৃতির সাথে খাপ খাইয়ে নিতে পারলো,তারা টিকে গেল এবং বাকিরা অবলুপ্ত হলো।

অনেকেই বিবর্তনবাদ মানতে রাজি হন না।অথচ আমাদের জ্ঞান যত সমৃদ্ধ হচ্ছে,ততই আমরা হাড়ে হাড়ে বুঝতে পারছি যে বিবর্তনবাদ সম্পূর্ণ সঠিক।এটি এমনকি পরীক্ষামূলকভাবে ল্যাবভরেটরিতেও ঘটানো সম্ভব হয়েছে।ফসিলের যত গভীরে আপনি যাবেন,ততই দেখবেন তা ধীরে ধীরে সরল হচ্ছে।LUCA(Last Universal Common Ancestor) একটি বৈজ্ঞানিক ফ্যাক্ট,যা ফসিলের গবেষণায় শতভাগ প্রমাণিত হয়েছে।

একই গোত্রীয় মানুষ আর শিম্পাঞ্জীর ভেতরে কার্যরত জিনের ৯৬% একই।অনেকেই বলে থাকেন যে বিবর্তন সত্যি হলে দুটি প্রাণীর মাঝের রূপটি কোথায়।এক্ষেত্রে অনেকক্ষেত্রেইই তা টিকে থাকতে পারে নি,অথবা সেই জীব এবং তার পূর্ব পুরুষের মাঝের জীবটিই হয়তোবা অন্য জীবটি।তবে অনেকক্ষেত্রে আবার এই মিসিং লিংক পাওয়া গিয়েছে।যেমন:তিমি মাছ।স্তন্যপায়ী হয়েও সে মাছের ন্যায় পানিতে থাকে।তার কংকালে পায়ের হাড় প্রমাণ করে তার পূর্বপুরুষ স্থলজ ছিল।এমনকি লেজসহ মানবদেহের ফসিল পর্যন্ত আবিষ্কৃত হয়েছে যা প্রমাণ করে আবারও,যে বিবর্তন কোনো বুলি না,এটা সত্য!!

মানবসদৃশ আরো অনেক প্রাণীর ফসিল পাওয়া গিয়েছে।যেমন:Sahelanthropus tchadensisArdipithecus ramidusAustralopithecus anamensisKenyanthropus platyops ইত্যাদি।এখনও কি কেও অবিশ্বাস করবে যে বিবর্তন সম্পূর্ণ সত্যি?!!!



বিঃদ্রঃগত দুইবছর আগে স্কুলের দেয়ালপত্রিকার জন্য আর্টিকেলটি লিখেছিলাম।এখনকার প্রেক্ষাপটে রিভিউ করা হয় নি সব তথ্যগুলো... আর পুরনো লেখা তাই তথ্যসূত্রগুলোও সংযুক্ত করতে পারলাম না।😅

Comments