Min menu

Pages

latest news

সুফিবাদ তথা মরমীদের মূলনীতি সমূহ -সুফিদের মৌলিক নীতি-১ম পর্ব-নুরুন নাহার ঝর্ণা








তাসাওফের মূল লক্ষ্য হলো খোদার সান্নিধ্য,দীদার দর্শন লাভ।পরম সত্ত্বার সহিত মিলনে যে পরম পরিতৃপ্তি,তাই সুফি সাধকের ক্ষণস্থায়ী পার্থিব প্রলোভন-আপাত মধুর ইন্দ্রিয় শক্তি হতে মুক্ত করে পরিপূর্ণ মনুষ্যত্বের সাধনায় সার্থক করে তোলেন।এই সাধনায় সুফিদের মূলনীতি সমূহ সাহায্য করে।নিম্নে সূফিবাদের মূলনীতি সমূহ নিয়ে আলোচনা করা হলো।

তওবা(অনুশোচনা):বিবিধ পাপ পরিবর্জন এবং পাপ পথে অগ্রসর না হওয়ার প্রতিজ্ঞা অঙ্গীকার হলো তওবা। আধ্যাত্মিক প্রারম্ভিক স্তরে যারা বিচরণ করে সে সকল মুরিদানের ক্ষেত্রে তওবা হলো কৃত পাপের অনুশোচনা,যাকে তওবাতুল নসুয়া বা মনে প্রাণে তওবা করা বলে।আল্লাহ তায়ালা ফরমান-

"যারা তওবা(অনুতাপ) করে নিজেদেরকে সংশোধন করে আল্লাহকে দৃঢ়ভাবে অবলম্বন করে এবং আল্লাহর জন্য তাদের ধর্মকে পবিত্র নির্মল করে তারা মোমিন বিশ্বাসীদের সঙ্গে থাকবে " (সূরা আন-নিছা:আয়াত-১৪৬)


তওবার কথা বোখারী ও মুসলিম শাস্ত্রে আলেখ্য।তওবা তিন প্রকার।


তাওয়াক্কাল(নির্ভরশীলতা):বিপদ,আপদ,বালা-মুসিবত,দুঃখ,কষ্ট,অভাব-অনটনসহ সকল অবস্থায় খোদার উপর নির্ভরশীল থাকাই তাওয়াক্কাল। কোরানে প্রকাশ-


"সুতরাং তাঁর(খোদার) উপাসনা করো এবং তার উপর নির্ভর(তাওয়াক্কাল) করো।"
{সূরা হুদ: আয়াত-১২৩}।

নির্যাতিত নিপীড়িত সুফি সাধক-ফকির দরবেশে সাধু সন্নাসীগণ সাধনার পথে,প্রেমের সাগরে স্রষ্টার উপর নির্ভরশীল থাকেন অনবরত।নবী বলেন-




"তোমরা যদি খোদার উপর তাওয়াক্কাল করতে পারো তবে তিনি যেভাবে পশু-পাখিদিগকে রিজিক প্রদান করেন সেভাবে তোমাদেরকে খাদ্য প্রদান করবে।"(বোখারী ও মুসলিম)


"খোদার উপর নির্ভরশীল হও।"(সূরা আল আহযাব:আয়াত-৪৮)



তহবিজ(পরিবর্জন):সুফি সাধকগণ পার্থিব জগতের সুখ-শান্তি,আরাম-আয়েশ,গাড়ি-বাড়ি,ভোগ-বিলাসিতা পরিহার করতো;খোদার প্রেমে মশগুল থাকেন।তারা ধন-সম্পদ,সোনা-গহনা,রাজকীয় খানা খাদ্য;পোশাক-পরিচ্ছদ উপেক্ষা করেন।তার জ্বলন্ত প্রমাণ হযরত ইব্রাহীম আদহাম আওলীয়া।কামদ,ক্রো্‌লোভ,মদ,মোহ, মাৎসর্য পরিত্যাগ করাই সুফির মৌলিক ধর্ম।এ প্রসঙ্গে সুফি প্রবর  নিজাম উদ্দীন আওলিয়ার উক্তি প্রণিধান যোগ্য।তিনি বলেন-"স্বল্প আহার,স্বল্প কথন,স্বল্প মেলামেশা ও স্বল্প নিদ্রার মধ্যেই নিহিত আছে মানুষের কামলিয়াত পূর্ণতা।"শতাধিক সুফি সাধকগণ ধন-সম্পদ,স্বর্ণ-রূপা,টাকা-পয়সার প্রতি সম্পূর্ণ বীতস্পৃহ ছিলেন।

হাদিসে প্রকাশ-"আস দুনিয়া জিফতুন ওয়া তালেবুহা কেলাবুন":অর্থাৎ এই দুনিয়া  মরা,পঁচা লাশ-যারা উহা ভক্ষণ করে তারা কুকুর সমতুল্য।



রাজনীতি করা কিংবা ধর্মের সাইনবোর্ড ব্যবহার করে চাঁদা তোলা বর্জন করতেন সুফি সাধকগণ।


সবুর(ধৈর্য):দুঃখ-কষ্ট,ব্যথা-বেদনা ও খোদার কঠিন পরীক্ষার সময় ধৈর্য অবলম্বন করা সুফিদের মৌলিক পন্থা।সুফিদের উপর মুনাফিক মুসলমানের জোর-জুলুম,অত্যাচার-অবিচার হলেও তারা ধৈর্য ধারণ করেছেন।ইমাম আবু হানিফা,ইমাম মালেক,ইমাম হাম্বলী,ইমাম নাসাঈ,হযরত মনসুর হাল্লাজ,হযরত জুননুন মিশরী,আবুবকর শিবলী প্রমুখ মনীষীদের উপর শারীরিক নির্যাতন ও জেল-জুলুম হলেও তারা ধৈর্যশীল ছিলেন।আল্লাহ তায়ালা বলেন-


"তোমরা ধৈর্য ধারণ করো।নিশ্চয়ই আল্লাহ ধৈর্যশীলদের সঙ্গেই আছেন।"
(সূরা আল আনফাল:আয়াত-৪৬)

হাদিসে আছে ,"আছছাবরু নিছফুল ঈমান";অর্থাৎ ধৈর্য ইমানের  অর্ধাংশ।


ইসতিসলাম(আত্মসমর্পণ)- 


                                     আল্লাহতে পরিপূর্ণ আত্মসমর্পণই সুফিদের মর্মকথা।আল্লাহ ,রাসূল,পীর-মোর্শেদের সান্নিধ্যে আত্মসমর্পণ করাই একান্ত কর্তব্য।কোরানে প্রকাশ-


"বলো!আমার উপাসনা,কোরবানি,আমার জীবন,আমার মরণ সমস্তই বিশ্ব নিয়ন্তা খোদার জন্য।"
{সূরা আল আনআম:আয়াত-১৬২}

অহংবোধ,ভন্ডুলতা,হামবড়া তালাক পরিত্যাজ্য।

এখলাস(পরিশুদ্ধতা):দেহ-মনের পাপরাশি হতে পরিত্রান থাকাই এখলাস।সুফিসাধকগণ মূলত হৃদয়ের পবিত্রতা ও সরলতা রক্ষা করেন।তাদের মতে একমাত্র পূত পবিত্র অন্তঃকরণে খোদার নূর প্রতিবিম্ব হয়।সুফিরা অহরহ খোদার ধ্যানে মশগুল থাকেন।খোদা ব্যতীত অন্য কিছু তাদের মনে স্থান পায় না।

এশকে এলাহি(স্রষ্টার প্রেম):খোদা প্রেমই সুফিবাদের প্রধান বৈশিষ্ট্য।সুফিদের মতে-খোদার সঙ্গে মানুষের সম্পর্ক প্রেমের।সৃষ্টি রহস্য প্রেম।প্রেমের মাধ্যমেই সুফি তার নিজ সত্ত্বাকে খোদার সত্ত্বার সঙ্গে একীভূত করতে সমর্থ হন।এই কারণে সুফিবাদকে প্রেমধর্ম হিসেবে অভিহিত করা হয়।



দরবেশ জালালউদ্দীন রুমী বলেন-"প্রেমেরই জন্য মানব সৃষ্টি নতুবা খোদার উপাসনার জন্য ফেরেশতাগণ কম ছিলনা।"

                                       প্রেম ব্যতীত আত্মার উন্নতি অসম্ভব।







Comments