Min menu

Pages

latest news

রসায়নের সংক্ষিপ্ত ইতিহাস-আরিফ শাহরিয়ার


জগতের সবচেয়ে প্রাচীন ও রহস্যময় বিদ্যাগুলোর মধ্যে রসায়নের নাম আসলে তার স্থান একটু উপরেই দিতে হয়।অজানা জিনিসকে জানবার আগ্রহ থেকেই ধীরে ধীরে গড়ে ওঠে বিজ্ঞানের ভিত।
রসায়ন হলো পদার্থের গঠন,সংযুক্তি,ধর্মে এবং রাসায়নিক বিক্রিয়ার সময় পদার্থের পরিবর্তন সংক্রান্ত বিজ্ঞান।
ইতিহাসবিদগণের মতে,খ্রিষ্টের জন্মের পাঁচ হাজার বছর আগের দিকে আগুনে মাটি গরম করা থেকে কুমারশিল্পের উদ্ভব ঘটে।তারা কঠিন মাটিকে নানা আকার দিয়ে তার ব্যবহার শুরু করে।
আবার,২০০০ খ্রিষ্টপূর্বাব্দে মানুষ বালি,চুনাপাথর,সোডা মিশিয়ে গরম করলে তা একটি স্বচ্ছ বস্তুতে রূপান্তরিত হয় যাকে আমরা এখন কাঁচ বলে থাকি।
আমাদের ভারতবর্ষে প্রায় ৫০০০ বছর পূর্বেই কাপড়কে আকর্ষনীয় করে তোলার জন্য রঙের ব্যাবহার শুরু হয়েছিল।এভাবে নানাভাবে মানুষের মনে এসব কর্মের কার্যকরণ করবার কথা মাথায় আসে।এই 'কেন' থেকেই রসায়নের উৎপত্তি।
তবে আধুনিক রসায়নের উৎপত্তি হয়েছে মূলত আলকেমি থেকে।হ্যা,সেই আলকেমি যা দিয়ে তারা নাকি পরশপাথর(Philosopher's Stone) তৈরি করেছিল।হ্যা,অনেকেই দাবি করতেন যে তারা নাকি ল্যাবরেটরিতে স্বর্ণ বা পরশপাথর তৈরি করতে পারতেন।যেমনঃআরব রসায়নবিদ জাবির ইবনে হাইয়ান(৭২২-৮০৩)।
জাবির ইবনে হাইয়ান(৭২২-৮০৩)


শুরুর দিকে এরিস্টটলের ধারণার উপরেই আলকেমি শাস্ত্র গড়ে উঠেছিল।তিনি মনে করতেন সব কিছুর মূলে কিছি মৌলিক বস্তু থাকে,যার গুণ হলো চারটা-গরম,ঠান্ডা,শুকনো এবং ভেজা।যার প্রতি একজোড়া বৈশিষ্ট্যকে নিয়ে পানি(ঠান্ডা ও ভেজা),আগুন(গরম ও শুকনো),বায়ু(গরম ও ভেজা) এবং পৃথিবী(ঠান্ডা ও গরম)।তিনি মনে করতেন সবকিছুই খাঁটি হতে চায়।স্বর্নের মতো খাঁটি হতে কোন বস্তুকে প্রকৃতি সাহায্য করে বটে কিন্তু অনেক সময় নিয়ে।এই দীর্ঘস্থায়ী প্রক্রিয়াকে দ্রুততর করাই আলকেমির উদ্দেশ্য ছিল।
৩০০ খ্রিষ্টাব্দের দিকে আলকেমি বিদ্যাটি ছড়িয়ে পরতে থাকে.৬০০ খ্রিষ্টাব্দের দিকে আরবরা এইক্ষেত্রে আগ্রহ দেখায়,যার উজ্জ্বল উদাহরণ জাবির ইবনে হাইয়ান(৭২২-৮০৩)।
১১-১৩ শতকে আলকেমি বিদ্যা পশ্চিম ইউরোপে প্রবলভাবে ছড়িয়ে পরে।এসময়ে উল্লেখযোগ্য আবিষ্কার এলকোহল এর তীব্র দ্রবণ(Aqua vitae).
১৪-১৫ শতকে আলকেমিস্টরা তাদের কাজে মাত্রাতিরিক্ত মত্ত হয়ে পরে।গোপনে তাদের সবার লক্ষ্য ছিল পরশপাথর বানানো।যার সংস্পর্শে সাধারণ বস্তুও নিরেট স্বর্নে পরিণত হবে।
আমাদের আজকের 'কেমিস্ট্রি(Chemistry)' শব্দটির উৎপত্তি কিন্তু সেই আলকেমি থেকে।যদিও এর উৎপত্তি সম্পর্কে মতভেদ রয়েছে।
খ্রিষ্টপূর্ব ১০০০ বছরেরও পূর্বে প্রাচীন সভ্যতার মানুষ যেসব প্রযুক্তি ব্যবহার করতো, তাই পরবর্তিতে রসায়নের বিভিন্ন মৌলিক শাখা গঠন করে। আকরিক থেকে ধাতু নিষ্কাশন, মৃৎশিল্প নির্মাণ, ধাতুর প্রলেপন, মদ তৈরি, প্রসাধনী ও রঙের জন্য রঞ্জক পদার্থ তৈরি, উদ্ভিদ থেকে রাসায়নিক পদার্থ আহরণ এবং তা দিয়ে সুগন্ধি ও ঔষধ তৈরি, পনির তৈরি, কাপড়ের রঙ, চামড়া সংরক্ষণ, চর্বি হতে সাবান উৎপাদন উত্যাদি নানা প্রকার পদ্ধতি প্রাচীন সভ্যতার মানুষ অবলম্বন করতো।

পদার্থের প্রকৃতি ও রূপান্তর সম্বন্ধে দার্শনিক প্রচেষ্টা ব্যর্থ হয়। এছাড়া আলকেমির বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যাও ভুল প্রমাণিত হল। তবে এসংক্রান্ত পরীক্ষা এবং ফলাফল সংরক্ষণ বিজ্ঞানের ভিত্তি প্রতিষ্ঠায় ভূমিকা রাখে। রবার্ট বয়েলের অনুসন্ধান ও গবেষণার ফলে যখন আলকেমি এবং রসায়নের মধ্যে স্বতন্ত্র পার্থক্য সূচিত হয় তখন থেকেই আধুনিক রসায়নের উদ্ভব ঘটতে শুরু করে। রসায়ন বিজ্ঞানের একটি পূর্ণাঙ্গ শাখায় পরিণত হয় যখন অ্যান্তনি ল্যাভয়শিয়ে ভরের নিত্যতা সূত্র আবিষ্কার করলেন। এই সূত্র রাসায়নিক ঘটনাবলির সূক্ষ পরিমাপ এবং পরিমাণগত পর্যবেক্ষণ ব্যাখ্যা করে। তাই যখন আলকেমি এবং রসায়ন কেবল পদার্থের প্রকৃতি ও রূপান্তর সম্বন্ধে আলোচনা করত তখন রসায়নবিদগণ বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি প্রয়োগের মাধ্যমে রসায়নের মৌলিক বিষয়াবলি উদ্ভাবনের চেষ্টা করতেন। রসায়নের ইতিহাস তাপগতিবিদ্যার ইতিহাসের সাথে পরস্পরগ্রন্থিত, বিশেষ করে বিজ্ঞানী উইলিয়ার্ড গিবসের কাজের জন্যে।
আর তারপরও এই দীর্ঘ পথ পরিক্রমায় অসংখ্য চিন্তাবিদ,দার্শনিক,বিজ্ঞানী,রসায়নবিদদের হাত ধরে যেন সত্যিই পরশপাথরের সংস্পর্শেই আধুনিকতার উজ্জ্বল্যতায় জ্বলজ্বল করছে।সেই কল্পনার পরশপাথর বাস্তবায়িত না হলেও অধরা থেকেও যেন প্রতিনিয়ত সংস্পর্শ করে এই শাস্ত্রটিকে আরও আধুনিক করে তুলছে।
তথ্যসূত্রঃ
১.উইকিপিডিয়া
২.অন্যরকম বিজ্ঞানবাক্স

أنت الآن في المقال الأخير

Comments