বিখ্যাত ম্যাগাজিন ফোর্বস এর মতে পৃথিবীর ৯০% স্টার্ট-আপ কোম্পানী ফেইল করে। আজকে আমি শেয়ার করবো, কেন ৯০% স্টার্ট-আপ কোম্পানী ফেইল করে। এটা নিয়ে বিশাল বড় বড় বিজনেস টাইকুনের অনেক লেখা, ভিডিও আপনি পাবেন। সেগুলোর উপর তথ্য উপাত্ত বিশ্লেষণ করে এবং ব্যাক্তিগত কিছু অভিজ্ঞতা যুক্ত করে আমি এ লেখাটি লিখেছি।
প্রথমেই বলবো স্টার্ট-আপ কোম্পানী কি?
স্টার্ট-আপ কোম্পানী হলো এমন একটা কোম্পানী যারা তাদের অপারেশনের প্রাথমিক পর্যায়ে আছে। এক বা একাধিক কো-ফাউন্ডার মিলে কোন একটা প্রোডাক্ট বা সার্ভিস ডেভেলপ করে যার মার্কেট ডিমান্ড আছে বলে উদ্দ্যোক্তারা বিশ্বাস করে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে উদ্দ্যোক্তারা অন্য কোন সোর্স থেকে ফান্ড কালেক্ট করে এবং সমাজের কোন সমস্যাকে সমাধান করার চেষ্টা করে।
এবার সরাসরি আসা যাক, স্টার্ট-আপ কোম্পানীগুলো কেন ফেইল করে।
(১) প্লানিং এর অভাবঃ ডেটা এনালিসিস করলে দেখা যায়, যে সকল উদ্দ্যোক্তারা স্টার্ট-আপ কোম্পানী দেয় তাদের অনেকের ব্যবসায়িক পূর্ব অভিজ্ঞতা থাকে না। ফলে তারা বিজনেস প্ল্যানিং সঠিকভাবে নির্ধারন করতে ব্যার্থ হয়। একটা ব্যবসার জন্য একটা ব্র্যান্ড-নিউ আইডিয়া কিম্বা ইনভেষ্টমেন্ট যতটা না দরকারী তার চেয়েও হাজারগুন বেশি দরকার প্লানিং। আপনার চমৎকারসব আইডিয়া কিম্বা বিশাল ইনভেষ্ট হলেও, যদি প্লানিং ভাল না থাকে, আপনার বিজনেসে লস করার সম্ভাবনা ৯০%। কাজেই মাঠে নামার আগে আপনার নেক্সট ১০ টা স্টেপ কি, আগামি ১ বছরে টার্গেট কি, ৫ বছরে টার্গেট কি, ১০ বছরে আপনি কোথায় যেতে চান এবং সেই টার্গেটে পৌছাতে কি কি চ্যালেঞ্জ আছে, তার জন্য আপনার প্লানিং কি, সেটা ঠিক না করতে পারলে বিসনেসে লস খাওয়ার সম্ভাবনা বেশি।
(২) স্কিলসেট না থাকাঃ পৃথিবীতে এখন আইটি এবং আইটি'স এর জয়-জয়কার। ধরুন আপনি একটা আইটি রিলেটেড স্টার্ট-আপ করতে যাচ্ছেন। আপনাদের টিমের কো-ফাউন্ডারের মধ্যে যদি অন্তত একজন এই বিষয়ে এক্সপার্ট না থাকে, সেই স্টার্ট-আপে ফেইল করার সম্ভাবনা অনেক বেশি। কারন একজন CTO নিয়োগ দিয়ে আপনি যে পরিমাণ তার জন্য অর্থ ব্যায় করবেন, তাতে আপনার ইনভেষ্টমেন্টের ১ বছরে অনেক বড় অংশ চলে যাবে। কাজেই টিমে অবশ্যই সঠিক স্কিল-সেটের লোক আবশ্যক।
(৩) ভুল মার্কেটিং পলিসিঃ অনেক স্টার্ট-আপ কোম্পানী দেখা যায়, ভাল প্রোডাক্ট বা সার্ভিস নিয়ে মাঠে নামে। কিন্তু ভুল মার্কেটিং পিলিসির কারনে কোম্পানির স্টেক-হোল্ডাররা ক্ষতিগ্রস্থ হয়। কিছু ক্ষেত্রে দেখা যায়, এগ্রেসিভ মার্কেটিং পলিসির কারনে তাদের ইনভেষ্টমেন্ট ক্যাপিটালের বেশিরভাগ খরচ হয়ে গেছে কিন্তু মার্কেট থেকে সেই পরিমাণ রিটার্ণ আনতে পারছে না। সাধারনত কোম্পানীতে বিজনেস বা মার্কেটিং ব্যাকগ্রাউন্ডের উদ্দ্যোক্তা বেশি থাকলে এই ভুলটি করে থাকে। অপরদিকে দেখা যায়, কিছু কোম্পানী প্রোডাক্ট কোয়ালিটি নিয়ে বেশি ফোকাস করে, মার্কেট ডিমান্ড নিয়ে চিন্তা না করে কোম্পানী ব্যাবসায়িকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হয়। এই কারনেই জাপানের অনেক বিখ্যাত কোম্পানী এখন ইতিহাস হয়ে গেছে, কিন্তু চায়না সারা দুনিয়া দখল করে ফেলছে। অভিজ্ঞতা বলে, বেশির ভাগ উদ্দ্যোক্তা টেকনিক্যাল মাইন্ডসেটের হলে এই ভুলটা করে। কাজেই সঠিক মার্কেটিং পলিসি, সঠিক উদ্দ্যোক্তা নির্বাচন করা, সঠিক সময়ে সঠিক সিদ্ধান্ত নেওয়া অনেক গুরুত্বপুর্ণ। এক কথায় বললে, প্রত্যেক কাজের মধ্যে একটা ব্যালেন্স রক্ষা করা ব্যবসায় সাফল্যের প্রথম ধাপ।
(৪) ভুল মার্কেট এনালিটিক্সঃ অনেক ব্যবসাই কাষ্টমার ফোকাস কাজ করতে পারে না। ধরুন আপনার কাছে একটা আইডিয়া আছে। কিন্তু আপনার মার্কেট এনালিটিক্স নিয়ে সঠিক ডাটা নেই। আপনি জানেন না, মার্কেটের ডিমান্ড কি, কাষ্টমারের বাজেট কেমন, আপনার মার্কেটে টিকে থাকতে কত পরিমানে ইনভেষ্টমেন্ট দরকার। এই সকল কিছু Key Data না থাকায় অনেক ভাল উদ্দ্যোগও কিছুদিন পরে ভেস্তে যায়। উদ্দ্যোক্তা হতে হলে আপনার মার্কেট সম্পর্কে সম্যক ধারনা থাকতে হবে। নিজেকে বই পড়তে হবে, মার্কেটে প্রতিযোগীদের সাথে মিশতে হবে, রেগুলার মার্কেট স্টাডি করতে হবে, আপ-টু-ডেট না থাকলে আপনার বিজনেস ফেইল করবে, সেটাই স্বাভাবিক।
(৫) প্রাইসিং পলিসি এবং মার্কেট শেয়ারঃ অনেক ক্ষেত্রেই দেখা যায়, আপনি হয়ত লোকালি কোন প্রোডাক্ট তৈরি করছেন, ভাল দামে বিক্রি করছেন। সব মিলিয়ে ভালই চলছে। কিন্তু হঠাৎ করে সরকার হয়তো সেই প্রোডাক্ট এর ইমপোর্ট ট্যাক্স কমিয়ে দিয়েছে। ফলে অনেকেই ইমপোর্ট করে সেই প্রোডাক্ট বিক্রি করে আপনার থেকে বেশি ভাল করা শুরু করেছে। কিন্তু আপনি আপনার প্রাইসিং পলিসি চেঞ্জ করেন নি। ফলে আপনি আপনার মার্কেট শেয়ার হারাতে শুরু করবেন। আর এভাবেই সফল স্টার্ট-আপ ফেইল করতে পারে।
(৬) দ্রুত এক্সপানশন এবং ফোকাসড না থাকাঃ অনেক ব্যবসা দেখা যায়, শুরুর ২ বছর হয়ত ২০০% বিজনেস গ্রোথ করেছে, কিন্তু পরের বছর থেকেই কার্ভ ডাউন। এর কারন তারা শুরুতে মার্কেটে যে প্রোডাক্ট বা সার্ভিস নিয়ে এসেছিল সেটার একটা ডিমান্ডের সাথে তারা হয়ত সাপ্লাইটা ঠিক রেখেছিল। কিন্তু কিছুদিন না যেতেই তারা তাদের প্রোডাক্ট বা সার্ভিস নিয়ে এসেছিল সেটিতে ফোকাস না করে বেশি লাভের জন্য অন্যদিকে চলে যায়। ফলে তাদের নিশ গ্রাহকগুলো হারাতে থাকে। অন্যদিকে দ্রুত এক্সপানশানের ফলে, এমপ্লয়ি বেতন, ইনভেষ্টমেন্টের সাথে মার্কেটিং এর ব্যালেন্স ঠিক না রাখতে পেরে কোম্পানী কলাপ্স করে। এজন্য এক্সপেরিয়েন্সড ইনভেষ্টররা সাধারনত স্টার্ট-আপ কোম্পানীগুলোকে এই এডভাইস দিয়ে থাকে যে, ফোকাসড থাকা এবং দ্রুত এক্সপানশান না করে, মার্কেটবুঝে আগাতে। কথায় বলে, slow and steady wins the race.
(৭) অন্যান্যঃ উপরের পয়েন্টগুলো প্রধান পয়েন্ট হলেও এছাড়া ফাউন্ডারদের বেশি বেতন, উচ্চ বেতনে এক্সিকিউটিভ হায়ার করা, ভুল লোক হায়ার করা, ফান্ড শেষ হয়ে যাওয়া, প্রোডাক্ট/সার্ভিস কোয়ালিটি ভাল না থাকা, ভুল সময়ে মার্কেট এন্ট্রি করা, মার্কেটে অত্যাধিক প্রতিযোগীতা থাকা, উদ্দ্যোগতাদের সাথে মতের মিল না থাকা, লিডারশীপের অভাব অন্যতম কারন।
Comments
Post a Comment