Min menu

Pages

latest news

অধ্যবসায়-প্রবন্ধ রচনা

 ভূমিকা :            "কেন পান্থ ক্ষান্ত হও হেরি দীর্ঘ পথ

                             উদ্যম বিহনে কার পুরে মনোরথ?"    -কৃষ্ণচন্দ্র মজুমদার


সময়ের সঙ্গে জীবন, জীবনের সঙ্গে কর্ম ও অধ্যবসায় - একই বিনিসুতোর মালায় গাঁথা।একটিকে বাদ দিয়ে অন্যটি কল্পনা করা যায় না।এ পৃথিবীতে যে-কোনো কাজ করতে গেলে সফলতা ও বিফলতা উভয় প্রকার ঘটনাই ঘটতে পারে।অধ্যবসায় সফলতার চাবিকাঠি।অধ্যবসায় ছাড়া মানবজীবনে উন্নতির আশা কল্পনা মাত্র।


অধ্যবসায় কী ও এর বৈশিষ্ট্য : মানুষ জীবনকে সাজাতে চায়,সফল করতে চায় কিন্তু জীবনের পথ খুব সহজ নয়।জীবনের সব কাজই সহজে সমাধা হয় না।অনেক কাজেই প্রথমবারে সফলতা আসে না।এমনকি পরের বারও সফলতা নাও আসতে পারে।কিন্তু এতে হতাশ হলে চলবে না।বার বার চেষ্টা করতে হয়।তাতে এক সময় না একসময় সাফল্য আসবে।সাফল্য লাভের এই প্রয়াসই অধ্যবসায়।এই ধারণাকে কবি ফুইয়ে তুলেছেন প্রবাদতুল্য একটি কবিতায়,                                           'পারিব না এ কথাটি বলিও না আর

                                 পারো কি না পারো করো যতন আবার।

                                 একবার না পারিলে দেখ শতবার।'

কোনো কাজে সফলতা অর্জন করতে হলে ধৈর্য ও সহিষ্ণুতার মাধ্যমে নিরবচ্ছিন্ন চেষ্টা করার নামই অধ্যবসায়।অধ্যবসায় হচ্ছে কতিপয় গুণের সমষ্টি।চেষ্টা, উদ্যোগ, আন্তরিকতা, পরিশ্রম, ধৈর্য ইত্যাদি গুণের সমন্বয়ে অধ্যবসায় পরিপূর্ণতা লাভ করে।মনের আস্থা ও বিশ্বাসকে বাস্তবে রূপদানের জন্যে দৃঢ় সংকল্প নিয়ে কঠোর পরিশ্রম আর ধৈর্যের মধ্য দিয়ে ঈস্পিত লক্ষ্যে পৌছানোর মধ্যেই অধ্যবসায়ের সার্থকতা নিহিত।বিশ্ববিখ্যাত মিথ লেখক কামু তাঁর 'মিথ অফ সিসিকাস'-এর সূচনা করেছেন এভাবে,দেখা যাচ্ছে,এই কাহিনীর নায়ক ভারী একখানা পাথর বয়ে তুলছে পাহাড়ের ওপর,কিন্তু সঙ্গে সঙ্গেই তা পরে যাচ্ছে শতশত ফিট নিচে।আবার তাকে তুলতে হচ্ছে।এই রা নির্ধারিত শাস্তি।কিন্তু হতোদ্যম হয়নি সে।এভাবে যতোবার তুলছে এই ভারী পাথরখণ্ড ততোবারই তা আবার নিচে পরে যাচ্ছে।সত্য বট,এই সফলতাহীন কাজে কোনো আনন্দ নেই,সুখ নেই।কিন্তু ' মিথ অফ সিসিকাসের' নায়ক পরাভবকে স্বীকার করে না,যতবার পরে যায় ততবার সে টেনে তোলে সেই পাথরখণ্ড।এই যার সাধনা ও অধ্যবসায় সেই মানুষ কি কখনো হারতে পারে? বর্তমান পৃথিবীর মানুষও এই অবিরাম অব্যাহত প্রয়াস ও উদ্যমকেই বেছে নিয়েছে।তার অধ্যবসায়ের ব্লেই সফল তাকে হতে হবে।সফল সে হচ্ছেও।জ্ঞানে, বিজ্ঞানে, নৈপুণ্যে, দক্ষতায়, শিল্পে, সাহিত্যে, সঙ্গীতে, ক্রীড়ায়, আবিষ্কারে, উদ্ভাবনে।সে তার অধ্যবসায়ের গুণে,শ্রম ও সাধনায় আলোকিত,বিকশিত,উদ্ভাসিত করছে পৃথিবী!পৃথিবীর এই উন্নতি ও সাফল্যের মূলে রয়েছে অনেক বছরের নিরলস অধ্যবসায়।


অধ্যবসায়ের গুরুত্ব বা প্রয়োজনীয়তা:মানবসভ্যতার মূলে রয়েছে অধ্যবসায়ের এক বিরাট মহিমা।মানবজীবনের যেসব গুণ জীবনকে সুন্দর ও সার্থক করে গড়ে তুলতে পারে তার মধ্যে অধ্যবসায় হলো অন্যতম।মানবজীবনের যেকোনো কাজে বাধা আসতে পারে, কিন্তু সে বাধাকে ভয় করলে চলবে না, কেননা 'জীবনের সমস্যাকে এড়িয়ে যাবার অর্থ হচ্ছে, জীবনকে অস্বীকার করা'(-জন লিলি)।রাতের আঁধার পেরিয়ে যেমন দিনের আলো এসে দেখা দেয়,ঠিক তেমনি বারবার অবিরাম চেষ্টার ফলেই মানুষের ভাগ্যাকাশে উদিত হয় সাফল্যের শুকতারা!অধ্যবসায়ের গুণেই মানুষ বড় হয়, অসাধ্য সাধন করতে পারে।সকল ধর্মগ্রন্থে অধ্যবসায়কে একটি চারিত্রিক গুণ হিসেবে দেখানো হয়েছে।বিশ্বাস, মেধা, সুযোগ কোনো কিছুই চূড়ান্ত সার্থকতা এনে দিতে পারে না যদি না তাদেএ যথার্থ প্রয়োগে অধ্যবসায়কেই মুখ্য করে তোলা হয়।সংসারে প্রতিটি মানুষ্পকে তার জন্মের পর থেকে মৃত্যু পর্যন্ত প্রতিটি মুহূর্তে অসংখ্য প্রতিকূলতার বিরুদ্ধে  সংগ্রাম করতে হয়।একমাত্র অধ্যবসায়ী ব্যক্তির পক্ষেই এয়াওব বাধাবিঘ্ন অতিক্রম করে জীবন সংগ্রামে জয়ী হওয়া সম্ভবপর!নিজেকে সত্যিকার মানুষ হিসেবে গড়ে তোলার জন্যে এবং দেশ, জাতি ও বৃহত্তর মানবসমাজের জন্যে তাকে কিছু-না-কিছু অভদান রাখতে হয়।এ ক্ষেত্রে অধ্যবসায়ের কোনো বিকল্প নেই।যে অধ্যবসায়ী নয় মনের দিক থেকে সে পঙ্গু!ফলে সমাজে তার দ্বারা কোনো মহৎ কাজ সম্ভব নয়!বস্তুত জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রেই অধ্যবসায়ের প্রয়োজনীয়তা অপরিসীম।নৈরাশ্য বা ব্যর্থতাকে জয় করার প্রধান উপায় হচ্ছে অধ্যবসায়-"Failure is the pillar of success"




অধ্যবসায়ের উদাহরণ:জগতে যত বপড় শিল্পী, সাহিত্যিক, বৈজ্ঞানিক, সেনানায়ক, ধর্মপ্রবর্তক রয়েছেন তাঁদের সবাই ছিলেন অধ্যবসায়ী।ইতিহাসের পাতায় পাতায় রয়েছে তার দৃষ্টান্ত!মহাকবি ফেরদৌসি দীর্ঘ ত্রিশ বছর ধরে রচনা করেছিলেন অমর মহাকাব্য 'শাহনামা'।জ্ঞানেন্দ্রমোহন দাস বিশ বছরের একক প্রচেষ্টায় রচপ্না করেন এক লক্ষ পনের হাজার শব্দ সংবলিত 'বাঙ্গালা ভাষার অভিধান।' আবদুল করিম সাহিত্যবিশারদ কোনো প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা ছাড়াই নিজের চেষ্টা ও সাধনায় দারিদ্রতার সঙ্গে লড়াই করে সংগ্রহ করেছিলেন দু'হাজার প্রাচীন পুঁথি, যার ফলে বাংলা ভাষা ও সাহিত্যের প্রায় চারশ বছরের ইতিহাসের অজানা অধ্যায় উদঘাটিত হয়!১৭৫৫ খ্রিস্টাব্দে  বেরোয় জনসনের বিখ্যাত অভিধান 'এ ডিকশনারি অফ দি ইংলিশ ল্যাংগুয়েজ' যাকে ইংরেজ জাতি গ্রহণ করে এক মহৎ কীর্তিরূপে : ফরাসিরা যা সম্পন্ন করেছে অ্যাকাডেমির সাহায্যে ইংরেজ তা করেছে এক ব্যক্তির শ্রমে-মেধায়, এ তৃপ্তি পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ভাষার মানরূপ শনাক্তির জন্যে অ্যাকাডেমি প্রতিষ্ঠার সমস্ত স্বপ্ন ত্যাগ করে ইংরেজ।মনীষী কার্লাইল অনেক বছরের শ্রমে ফরাসি বিপ্লবের এক অসামান্য ইতিহাস লিখেছিলেন।এ সবই অধ্যবসায়ের ফসল!স্কটল্যান্ডের রাজা রবার্ট ব্রুস

অধ্যবসায়ের আর এক জীবন্ত উদাহরণ। অগণিত ইংরেজ সৈন্যের সঙ্গে পুনঃপুন যুদ্ধে পরাজিত হয়ে পলায়ন করতে বাধ্য হয়েও রবার্ট ব্রুস ইংরেজ বাহিনীকে পরাজিত করার বাসনা ও চেষ্টা পরিত্যাগ করেন নি। বরং একনিষ্ঠ অধ্যবসায়ের ফলে তিনি যুদ্ধে জয়ী হন। এমনিভাবে স্যার ওয়াল্টার স্কট এর মতাে ব্যক্তি বার বার ব্যর্থ হয়েও অধ্যবসায়ের দ্বারা প্রতিষ্ঠা লাভ করেছেন। মুঘল সাম্রাজ্যের প্রতিষ্ঠাতা সম্রাট বাবর প্রথম জীবনে পিতৃরাজ্য থেকে বিতাড়িত হয়ে অসহায় জীবনযাপন করতে বাধ্য হন। কিন্তু তিনি অদম্য অধ্যবসায়ের বলে আফগানিস্তানের সম্রাট ও সমগ্র ভারতবর্ষের অধীশ্বর হয়েছিলেন। সম্রাট বাবরের পিতা তৈমুর লঙও ছিলেন অধ্যবসায়ের মূর্ত প্রতীক। প্রবল অধ্যবসায়ের দ্বারাই তিনি নিজের আয়ত্বে আনেন এশিয়া ও ইউরােপের একাংশ। মহাবিজ্ঞানী স্যার আইজ্যাক নিউটন নিজেই স্বীকার করেছেন বিজ্ঞানে তাঁর অবদানের মূলে আছে বহু বছরের একনিষ্ঠ ও নিরবচ্ছিন্ন শ্রম। নেপােলিয়ন বোনাপার্ট বলেছেন, 'Impossible is a word, which is only found in the dictionary of fools. '


অধ্যবসায়ীর জীবনাদর্শ:জীবনসংগ্রামে সাফল্য লাভের মূলমন্ত্র হচ্ছে, অধ্যবসায়। অর্ধ পৃথিবীর অধীশ্বর নেপােলিয়ন তার জীবনকর্মের মধ্য দিয়ে রেখে গেছেন অধ্যবসায়ের অপূর্ব নিদর্শন। কোনাে কাজকে তিনি অসম্ভব বলে মনে করতেন না। তাই তিনি একটি দরিদ্র পরিবারে জন্মগ্রহণ করেও ফরাসি জাতির ভাগ্যবিধাতা হতে পেরেছিলেন। শুধু অধ্যবসায়ের বলেই রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, জগদীশচন্দ্র বসু, কাজী নজরুল ইসলাম প্রমুখ মনীষী বিশ্বখ্যাত হয়েছেন ।পক্ষান্তরে, অধ্যবসায়ের অভাবে অনেক সম্ভাবনাময় জীবনও অকালে ঝরে যায়। অধ্যবসায়হীন ব্যক্তি জগতের কোনো কাজেই সফলতা লাভ করতে পারে না। তার জীবন ব্যর্থতায় পর্যবসিত হয়। অধ্যবসায়ীকে কখনােই অসহিষ্ণু হলে চলবে না। অধ্যবসায়ের মাধ্যমে নিজের যােগ্যতাকে অর্জন করা যেমন সম্ভব তেমনি যােগ্যতার বলে অনেক প্রতিকূলতা কাটিয়ে সাফল্যের শীর্ষে পৌঁছে যাওয়াও বিচিত্র নয়। এক্ষেত্রে যেটা সবচেয়ে জরুরি তা হচ্ছে নিজের ওপর পরিপূর্ণ আস্থা। তাই অধ্যবসায়ী হওয়ার প্রয়ােজনীয়তা উপলদ্ধি করে কবি বলেছেন-

'ধৈর্য ধরো, ধৈর্য ধরো!বাঁধো বাঁধো বুক,/শত দিকে শত দুঃখ আসুক আসুক।'

জীবনে দুঃখ আছে, গ্লানি আছে, পরাজয় আছে, ব্যর্থতা আছে, কিন্তু সেটাই শেষ কথা নয়!মানুষ তার উদ্যম ও প্রচেষ্টা দিয়ে এই ব্যর্থতাকে জয় করেছে।জয় করে চলেছে।মানুষের এই জয়ের ইতিহাসই বর্তমান পৃথিবীর চিত্র!বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বলেছেন-

'ব্যর্থ প্রাণের আবর্জনা পুড়িয়ে ফেলে

আগুন জ্বালো,আগুন জ্বালো,আগুন জ্বালো।'


ব্যক্তিজীবনে অধ্যবসায়ের গুরুত্ব: বিধাতা প্রত্যেক মানুষকেই প্রতিভা দিয়ে সৃষ্টি করেছেন এবং প্রতিভাকে বিকশিত করার বিবেক-বুদ্ধি দিয়েছেন। মানবজীবনের এই সুপ্ত প্রতিভাকে বিকশিত করতে হলে অধ্যবসায়ের কোনাে বিকল্প নেই। অনেকের ধারণা— অসাধারণ প্রতিভা ছাড়া কোনাে বড় কাজে সফলতা সম্ভব নয়। কিন্তু অসাধারণ প্রতিভা ছাড়াও নিরলস পরিশ্রম ও অধ্যবসায়ের দ্বারা যে কোনাে কাজে জয়যুক্ত হওয়া যায়। এ প্রসঙ্গে বৈজ্ঞানিক নিউটন বলেছেন-'আমার আবিষ্কারের কারণ প্রতিভা নয়, বহু বছরের চিন্তাশীলতা ও পরিশ্রমের ফলে দুরূহ তত্ত্বগুলাের রহস্য আমি ধরতে পেরেছি।' ফরাসি দার্শনিক ভলতেয়ার বলেছেন- 'প্রতিতা বলে কিছুই নেই। পরিশ্রম ও সাধনা করে যাও,তাহলে প্রতিভাকে অগ্রাহ্য করতে পারবে।' ডালটন স্পষ্ট ভাষায় বলেছেন, 'লােকে আমাকে প্রতিভাবান বলে, কিন্তু আমি পরিশ্রম  ছাড়া কিছুই জানি না।' তাই প্রতিভা লাভ করতে হলে অধ্যবসায়ী হওয়া প্রয়ােজন, এবং প্রতিভাকে অধ্যবসায়ের গুণে কাজে লাগাতে হবে, অন্যথায় সে-প্রতিভা কোনাে কাজে আসবে না।

ছাত্রজীবনে অধ্যবসায়ের গুরুত্ব : ছাত্রজীবনে অধ্যবসায়ের গুরুত্ব সর্বাধিক। ছাত্রজীবন আর অধ্যবসায় মুদ্রার এপিঠ আর ওপিঠ! বিদ্যার্জনের পথ কুসুমাস্তীর্ণ নয়। অলস, কর্মবিমুখ ও হতাশ ছাত্র-ছাত্রী কখনও বিদ্যালাভে সফলতা অর্জন করতে পারে না। একজন অধ্যবসায়ী ছাত্র বা ছাত্রী অল্প মেধাসম্পন্ন হলেও তার পক্ষে সাফল্য অর্জন করা কঠিন নয়। কাজেই অকৃতকার্য ছাত্র-ছাত্রীকে হতাশ না হয়ে পুনরায় দ্বিগুণ উৎসাহ নিয়ে অধ্যবসায়ে মনােনিবেশ করা উচিত। এ প্রসঙ্গে ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ বলেছেন, 

''কোন কাজ ধরে যে উত্তম সেই জন

হউক সহস্র বিঘ্ন ছাড়ে না কখন।''

শুধু অধ্যবসায়ই পারে ব্যর্থতার গ্লানি মুছে দিয়ে সাফল্যের পথ দেখাতে।


জাতীয় জীবনে অধ্যবসায়ের গুরুত্ব: মানুষ বিদ্যুৎ আবিষ্কার করে দূর করেছ আঁধার,বিমান আবিষ্কার করে জয় করেছে আকাশ, রকেটের সাহায্যে অর্জন করছে চন্দ্র বিজয়ের গৌরব। আর এসব সাফল্যের পেছনে কাজ করেছে মানুষের যুগ যুগান্তরের সাধনা, তার অবিরাম অধ্যবসায়। বর্তমান সভ্যতার যুগে মানুষ নিজ নিজ কৃষ্টি ও সভ্যতা অর্জন করতে চায়, পৌছতে চায় সভ্যতার চরম শিখরে!কিন্তু নানা প্রতিকূলতায় তা সহযে হয়ে ওঠে না।কোনো সভ্যতাই একদিনে গড়ে ওঠে নি। বার বার চেষ্টা ও সাধনার দ্বারা পূর্ণতা অর্জন করতে সক্ষম হয়েছে। সৃষ্টির প্রথম মানবগােষ্ঠীর সভ্যতাও স্তরে স্তরে গড়ে উঠেছে।বস্তুত সামগ্রিকভাবে একটি জাতির সগৌরবে আত্মপ্রতিষ্ঠার জন্য সকল নাগরিকেরই অধ্যবসায়ী হওয়া প্রয়োজন।পৃথিবীর বুকে তখনই মর্যাদাপূর্ণ জাতি হিসেবে সগৌরবে আত্মপ্রতিষ্ঠা লাভ সম্ভব যখন জাতীয় উন্নয়নে দল মত নির্বিশেষে সবাই সর্বশক্তি দিয়ে আত্মনিয়োগ ক্রবে।তাই জাতীয় জীবনে অধ্যবসায়ের গুরুত্ব অপরিসীম!


অধ্যবসায় ও উন্নত বিশ্ব : উন্নত বিশ্ব আজ অধ্যবসায়ের বলে সাফল্যের চরম শিখরে পৌছেছে। মালয়েশিয়া,থাইল্যান্ড, জাপান, কোরিয়া, আমেরিকা, কানাডা, যুক্তরাষ্ট্র কেবল অধ্যবসায়ের গুণেই উন্নতির শীর্ষস্থানে অবস্থান করছে।


অধ্যবসায় ও বাঙালি জাতি ও আমাদের কর্তব্য: আমরা বাঙালি জাতি। দুঃখজনক হলেও এ কথা সত্য যে, আমাদের অনেকের মধ্যে অধ্যবসায়ের মহৎ গুণটি অনুপস্থিত। আমাদের মধ্যে নেই কোনাে প্রচেষ্টা, নেই কোনাে উদ্যম, কোনাে আগ্রহ। বরং আছে আস্ফালন, হুঙ্কার, গরিমা ও নিজেকে প্রকাশ করার মিথ্যে বাহাদুরি। কেবল অধ্যবসায়ের অভাবে আজ আমরা এত পিছিয়ে আছি। জাতি হিসেবে আমরা তাই অনুন্নত। সুতরাং আর একটি মুহূর্তও বিলম্ব না করে নিজেদের অধ্যবসায়ী রূপে গড়ে তােলা খুবই জরুরি। আজ থেকে শত বছর আগে রবীন্দ্রনাথ বলেছিলেন, "পশ্চিম আজি খুলিয়াছে দ্বার / সেথা হতে সবে আনে উপহার", আজ সেই দুয়ার আরাে বেশি খােলা। আমরা যদি পেছনে পড়ে থাকি, উদ্বুদ্ধ না হই, উদ্যোগ গ্রহণ না করি সে হবে আমাদের ব্যর্থতা। আর ব্যর্থতার দায়ও আমাদেরই বহন করতে হবে। বহন করতেও হচ্ছে। উন্নত দেশের তুলনায় আমরা দরিদ্র থেকে আরাে দরিদ্র হচ্ছি, বাড়ছে আমাদের এই সংখ্যা, বেকারের সংখ্যা বাড়তে বাড়তে হচ্ছে চার কোটি পৌনে চার কোটি। আমরা কেন পেছনে পড়ে থাকব? আমরা কেন উঠে দাড়াবাে না? দুঃখ-দারিদ্র্যের এই অনিঃশেষ প্রক্রিয়ার মধ্যে আমরা কতাে নিষ্পেষিত হতে থাকব? এই বিজ্ঞান প্রযুক্তির উন্নতির যুগে, পৃথিবীর এই সাফল্য ও সমৃদ্ধির যুগে এই দুর্দশা ও দুরবস্থা কোনাে সম্মান বা গৌরবের বিষয় নয়। উন্নতির জন্য চাই সাধনা। নিরলস সাধনা, অধ্যবসায়। অধ্যবসায় ও শিক্ষা ছাড়া উন্নতি সম্ভব নয়। কিন্তু আমরা শ্রম ও সাধনার কথা ভুলে যাই। 

            "কাটা হেরি ক্ষান্ত কেন কমল তুলিতে / 

             দুঃখ বিনা সুখ লাভ হয় কি মহীতে?" 

এই সত্য আমরা প্রায়শই মনে রাখি না। ফলে উন্নতির স্বপ্ন স্বপ্নই থেকে যায়। এ যুগ বিজ্ঞানের যুগ। বিজ্ঞান প্রযুক্তিকে উপেক্ষা করে এ যুগে উন্নতি সম্ভব নয়। উন্নতি ও সাফল্য অর্জনের জন্য অসম্ভব বা অস্বাভাবিক কিছু করার প্রয়ােজন নেই। যার যেটুকু সাধ্য তার মধ্যদিয়ে আমরা উন্নতি ও সমৃদ্ধির জন্য কাজ করতে পারি। ক্ষুদ্র মাটির প্রদীপও রাত্রির গভীর অন্ধকার দূর করে। এই সাধ্য ও সাধনা দিয়েই সবকিছু করা সম্ভব। সাধ্যমতাে চেষ্টা করলে, অধ্যবসায়ী হলে, সাধ্যমতাে উদ্যোগ নিলে, নিজের সাধ্য বা সামর্থ্যকে কাজে লাগালেই সমাজে অনেক বড় বড় কাজ সম্পন্ন করা সম্ভব। কিন্তু এই সাধ্যেরই সদ্ব্যবহার আমরা করি না। সাধ্য থাকা সত্ত্বেও বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই আমরা নিষ্ক্রিয় ও উদ্যোগহীন। সব মানুষই কিছু কিছু পারে, কিছু কিছু পারে না। এই পারা, না-পরা নিয়েই মানুষ।আর এই নিয়েই তাকে শ্রম, সাধনা ও অধ্যবসায় করতে হয়। অধ্যবসায়ই তার পথ, এগিয়ে যাওয়ার পথ। পৃথিবীর সঙ্গে এভাবেই সে এগিয়ে যায়, অধ্যবসায়ের গুণে।


উপসংহার : ‘মন্ত্রের সাধন কিংবা শরীর পাতন' অধ্যবসায় সম্পর্কিত একটি পরম সত্য প্রবাদ। যে ব্যক্তি অধ্যবসায়ী নয়, সে জীবনের কোনাে সাধারণ কাজেও সফলতা লাভ করতে পারে না। জীবনের সফলতা এবং বিফলতা অধ্যবসায়ের ওপরই নির্ভর করে, তাই আমাদের সকলের উচিত অধ্যবসায়ের মতাে মহৎ গুণটিকে আয়ত্ত করা, পরশপাথরের মতাে এই পাথরটিকে ছুঁয়ে দেখা এবং সােনার কাঠির মতাে একে অর্জন করা। মনে রাখতে হবে, অধ্যবসায়ই জীবন, জীবনই  অধ্যবসায়!


























Comments